চীনে শ্রমিকের গড় মজুরি ৫০০ মার্কিন ডলার, ভিয়েতনামে ৩০০ আর বাংলাদেশে গড় মজুরি মাত্র ৬০ মার্কিন ডলার। সে কারণে ব্যবসায়ীরা এসব দেশের ব্যবসা গুটিয়ে বাংলাদেশে আসছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের(বেপজা)নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল কেএম মমিনুর রহমান।
বুধবার বেপজা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন বেপজা চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
শ্রমের উচ্চমূল্যের কারণে চীন থেকে ব্যবসায়ীরা অনেক আগে থেকেই থাইল্যান্ড মালয়েশিয়া-ভিয়েতনামে যাওয়া শুরু করে। সে কারণে এসব দেশেও শ্রমের গড়মূল্য বেড়ে ৩০০ ডলার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে শ্রমিকের গড় মজুরি (মাসে বেতন)৬০ থেকে ৬৫ ডলার রয়েছে।
বেপজা চেয়ারম্যান বলেন, “শ্রম মূল্যের বিশাল ব্যবধানের কারণে বাংলাদেশে উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকতে পারছেনা অন্য দেশের উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। তাই তারা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আসছে।”
তিনি বলেন, “অনেক বড় বড় কোম্পানি চীন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে।বাংলাদেশ তাদের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে।”
পিএইচ গার্মেন্ট থাইল্যান্ড থেকে ব্যবসায় গুটিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। বিশ্বখ্যাত এই কোম্পানিটিকে স্থান দেওয়া হয়েছে কর্ণফুলী এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে।
অন্যদিকে মালয়েশিয়ার সব কারখানা বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশে আসছে গ্লোবাল লেবেল। এই দু’টি কোম্পানি এরই মধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন বেপজা চেয়ারম্যান।
বিশ্বখ্যাত কোম্পানি স্যামসংও বাংলাদেশে আসতে চায়। এ জন্য তারা বেপজার কাছে আগ্রহের কথা জানিয়েছে। কোরিয়ান এই কোম্পানিটি বেপজার কাছে ৫০০টি প্লট চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে।
সরকার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে। ঢাকা বা চট্টগ্রাম ইপিজেডে তারা আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে ঢাকা বা চট্টগ্রাম ইপিজেডে এত বিশাল জমি খালি নেই। তাই চট্টগ্রাম ইপিজেডের পার্শ্বে একটি জায়গার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। তাদের বিনিয়োগের সাইজ হবে প্রায় বিলিয়ন ডলার।
চীনের ৫টি বড় কোম্পানি মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে ব্যবসা গুটিয়ে বাংলাদেশে আসতে চায় বলেও দাবি করেন তিনি।
বড় শিল্প কারখানা স্থাপন হলে বেকার সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আর এমনটি হলে দেশের চেহারা দ্রুতই বদলে যাবে বলেও দাবি করেন বেপজা চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই সময়টার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। আমরা যেন না হারাই এই সুযোগ।”
তিনি বলেন, “জুলাই-ফেব্রুয়ারি ৮ মাসে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত ইপিজেডে জমি দিতে না পারার কারণে।”
বেপজা এখন ইপিজেডগুলোর ভার্টিক্যাল সম্প্রসারণের দিকে নজর দিয়েছে। প্লট না দিয়ে স্পেস ভাড়া দেওয়া হবে। এতে একটি ব্লিডিংয়ে অনেক ছোট ছোট কোম্পানিকে স্থান দেওয়া সম্ভব হবে। বেপজা জমি ভাড়া দিলে প্রতি বর্গমিটারে বছরে ভাড়া আদায় করে গড়ে এক দশমিক ছয় ডলার। সেখানে স্পেস ভাড়া দিলে দুই দশমিক ৭৫ ডলার। এতে বেপজার আয়ও বেড়ে যাবে বলেও দাবি করেন চেয়ারম্যান।
সরকার নতুন অর্থনৈতিক জোন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এমনটি হলেও বিনিয়োগ বাড়বে বলে জানান তিনি।
শ্রমিকদের প্রশংসা করে বেপজা চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের শ্রমিকদের সম্পর্কে বিদেশিদের অনেক ভালো ধারণা তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশের শ্রমিকরা এখন ট্রেনার (প্রশিক্ষক)হিসেবে বিদেশ যাচ্ছে।”
সম্প্রতি ৩ জন শ্রমিক জাপান সফর করে। এলইডি চিপস তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। তারা সেখানে কয়েক দিন থেকে জাপানিজদের প্রশিক্ষণ দেয়।
তিনি বলেন, “ চাইনিজদের চেয়েও আমাদের শ্রমিকরা বেশি আন্তরিক ও দক্ষ। এ মূল্যায়ন আমার নয়, স্বয়ং চাইনিজদের এ মূল্যায়ন।”
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কোনো বাধা নয় মন্তব্য করে বলেন, “দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বেপজার কাজে সব সময় সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে।”
উল্লেখ্য, চলতি অর্থ বছরে ৮ মাসে ৩ হাজার ৬০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।যা বিগত অর্থ বছরের একই সময়ে চেয়ে ১৩.২৭ শতাংশ বেশি।
দেশের ৮টি ইপিজেডে মোট বিনিয়োগ রয়েছে দুই হাজার ৬৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এসব ইপিজেডে মোট ৫৬১টি শিল্প কারখানার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৪১৫টি কারখানা চালু রয়েছে। ১৪৬টি রয়েছে বাস্তবায়নাধীন।
চালু ৪১৫টি কারখানার মধ্যে ২৩৪ সম্পুর্ণ বিদেশি কোম্পানি, ১১৯টি কোম্পানি দেশীয় আর ৬২ কোম্পানি রয়েছে যৌথ মালিকানায়। এসব কারখানায় ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭২জন শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। যার মধ্যে ৬৪ শতাংশই নারী।