স্টাফ রিপোর্টার:নয়া পল্টনে বিএনপি’র তিগ্রস্ত কার্যালয় পরিদর্শন শেষে বিরোধী নেত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে প্রেস নোট দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস নোটটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হল।
বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত সোমবার, ১১ মার্চ বিএনপি’র প্রধান কার্যালয়ের সামনে উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা, ভাংচুর ও বোমাবাজির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কর্তৃক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উক্ত কার্যালয়ের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়া সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতারসহ বোমা বা অন্যান্য বেআইনী অস্ত্রের সন্ধানে তল্লাশী কার্যক্রম সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আজ (১৩-৩-২০১৩) যে বক্তব্য রেখেছেন সে সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। এ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য হলো:
গত ১১/০৩/১৩ তারিখ সোমবার বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। এ কর্মসূচিকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সভাস্থলকে কেন্দ্র করে আশেপাশে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সভার শেষ পর্যায়ে সভার কেন্দ্র থেকে আকষ্মিকভাবে পরবর্তী দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ১২/০৩/১৩ তারিখ হরতাল ঘোষণার সাথে সাথে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উচ্ছৃঙ্খল নেতা কর্মীরা একত্রে ০৮/১০ টি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, রিক্সা ভ্যানে আগুন ও আশেপাশের বিল্ডিং এ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে জনগণের সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি সাধন শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা নাইটিঙ্গেল মোড়ে অবস্থানরত পুলিশকে লক্ষ্য করে হাত বোমা, ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে এবং পুলিশের উপর চড়াও হবার অপচেষ্টা করে। পুলিশ দূর থেকে তাদেরকে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার অনুরোধ জানায়। পুলিশের অনুরোধে সাড়া না দিয়ে তারা আরও মারমুখী হয়ে পুলিশের উপরে বোমা, ইট পাটকেল নিক্ষেপ অব্যাহত রাখে এবং এ ধ্বংসাত্বক কার্যকলাপ অনুমান ৩০ (ত্রিশ) মিনিটকাল অব্যাহত রাখে। এ পর্যায়ে তারা বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশেপাশের ভবনের ছাদে ও সভাস্থলের নিরাপত্তার জন্য কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের হত্যা ও তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় এই পর্যায়ে এই এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ ঐ সকল উচ্ছৃঙ্খল ও সন্ত্রাসী নেতাকর্মীদের হাত থেকে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের জীবন ও জনগণের জানমাল রক্ষা এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ফলে উচ্ছৃঙ্খল জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থল থেকে এই দুষ্কর্মের সাথে জড়িত সন্দেহে ৩০/৪০ জনকে আটক করা হয়। সভাস্থলে আতঙ্ক ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী বোমাবাজ ও সন্দেহভাজন অনেক লোকজন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এ পর্যায়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভবন থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে আরও কয়েকটি হাত বোমা নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করার লক্ষ্যে তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরূপ তল্লাশি কালে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ থেকে ১০টি হাত বোমা উদ্ধার করা হয় এবং এসব নাশকতামূলক তৎপরতার সাথে জড়িত সন্দেহে উপস্থিত নেতাকর্মীদেরকে আইনানুগভাবে আটক করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিএনপিসহ ১৮ দলের এরূপ সন্ত্রাসীগণ কর্তৃক সৃষ্ট নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম আপামর দেশবাসী কয়েকটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ মার্চ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে আসবাবপত্রসহ মূল্যবান কাগজপত্র তছনছ করে। প্রায় ৪ ঘন্টার অভিযানে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। এ সময় অওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার সময় কর্তব্যরত সাংবাদিকসহ নিরীহ পথচারী ও অফিস ফেরত মানুষ সরকারি নির্যাতনের শিকার হন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দিলে সে সময়ের সরকারের নির্দেশে পুলিশ কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা আটক দলীয় কর্মীদের উদ্ধারে রওয়ানা হয়ে পথের বিভিন্ন স্থানে বাধা অতিক্রম করে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন। সে সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে বোমা বিস্ফোরণের আলামত হিসেবে জব্দকৃত সরঞ্জামাদি শেখ হাসিনাকে দেখিয়ে তা আওয়ামী লীগ অফিস থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। এ সময় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা বোমা মারার প্রত্যক্ষদর্শী আছে কিনা জানতে চাইলেও কোনো উত্তর পাননি।
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই তিনি দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন। তখন থেকে প্রায় নিয়মিতই আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সড়ক কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হতো।
এ প্রসংগে এও উল্লেখ করা যেতে পারে যে বিএনপি আমলে ২ অক্টোবর ২০০২ সেনাসদস্যরা ধানমন্ডিতে আওয়ামীলীগের কম্পিউটারাইজ্ড তথ্য কেন্দ্র, সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন-সিআরআইয়ে তান্ডব চালিয়ে সেটাকে তছনছ করে। প্রায় ৬ ঘন্টার এ অভিযানে কেন্দ্রটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বইপত্র-দলিল, কম্পিউটার সামগ্রী, সিডিসহ নানা সামগ্রী নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ধানমন্ডি থানায় একটি জিডি করা হয়। এই সহিংসতা পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত বিগত সরকারের উপরস্থ মহলের নির্দেশে সংগঠিত হয়। সেখানে তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত অফিস ছাড়াও একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, রেফারেন্স সংগ্রহ, নানা রিসার্চের ব্যবস্থা ছিল। প্রতিদিনের দেশি-বিদেশি নানা পত্রিকার ক্লিপিং, গুরুত্বপূর্ণ বইপত্রের বিশাল এক সংগ্রহ, বাংলাদেশ সম্পর্কে দেশে এবং বিদেশে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সব গ্রন্থরাজি, আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রকাশনার বই-পোস্টার-লিফলেট ছাড়াও নানা প্রকাশনার অনুলিপি, গত নির্বাচনের আগে-পরে জাতীয় সংসদের তিনশ’ আসনভিত্তিক সমুদয় পরিসংখ্যান, নির্বাচনের পরে আসনভিত্তিক, এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতির যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের একটি বিশেষ সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছিল সেখানে। বিরোধী দলের নেত্রীর সভা-সেমিনারের বক্তৃতা বা আওয়ামী লীগের যে কোন কর্মসূচি, প্রকাশনার জন্য যে কোন তথ্য সেখান থেকেই যোগান দেয়া হত। এছাড়া ১৪/১৫টি কম্পিউটার, ফোন, ফ্যাক্স, ফটোকপিয়ার ছাড়াও নানা সামগ্রী সেখানে ছিল। এই কেন্দ্রটি বিনষ্ট ও বন্ধকরণের কোন ব্যাখ্যা বা কারণ তৎকালীন কর্তৃপক্ষ কখনও জনগণকে জানায়নি।