গল (শ্রীলঙ্কা) থেকে: অনেকেই হয়তো নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখেছেন। একি স্বপ্ন নাকি বাস্তব! এ যেন এক অন্যরকম টেস্ট। সুনামি বিধ্বস্ত গল স্টেডিয়ামের নতুন যাত্রায় নতুন উচ্চতায় উঠে গেল বাংলাদেশ। সব স্বপ্ন এক সঙ্গে বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছে বাংলাদেশের সামনে। প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের ডাবল সেঞ্চুরি। এরপর নাসিরের সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো ড্র’র স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা চার উইকেটে ৫৭০ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। আর জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অল আউট হয় ৬৩৮ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে এই প্রথম ৬শ প্লাস রান। সেই সুবাদে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে লিড ৬৮ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকরা চতুর্থ দিন শেষে স্কোর বোর্ডে যোগ করেছে ১১৬ রান ১ উইকেট হারিয়ে। সেই হিসেবে লঙ্কানদের লিড ৪৮ রান। ক্রিজে ৪৯ রান করে অপরাজিত আছেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান সাঙ্গাকারা। আর প্রথম ইসিংসে ফিফটি হাঁকানো দিলশান দ্বিতীয় ইনিংসেও হাঁকিয়েছেন ফিফটি। তিনি অপরাজিত আছেন ৬৩ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ পর্যন্ত ১২টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। তার কোনটিতে জয় কিংবা ড্র কোনটি নেই। তবে আজ বাংলাদেশের সামনে প্রথম বার ড্র করার সুযোগ। আর তা হলে আরেকটি অর্জন যুক্ত হবে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে।
চতুর্থ দিনের শুরুতে আশরাফুল স্বপ্নে বিভোর ছিলেন প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে ডাবল সেঞ্চুরি করার। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভাঙলেও গল টেস্টের প্রথম ইনিংসটাকে এক কথায় বর্ণনা করা যায় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যরকম একটি দিন হিসেবেই। মুশফিকের সঙ্গে উইকেটে এসে স্বভাবসুলভ স্ট্রোকে রানের চাকা সচল রাখায় ব্যস্ত থাকেন নাসির হোসেন। আর তাদের দুজনের ব্যাটে বিদেশের মাটিতে প্রথম বারের মতো ৫০০ রানের মাইল ফলক স্পর্শ করে বাংলাদেশ। আর ব্যাটিং স্বর্গ বনে যাওয়া গলের উইকেটে প্রথম সেশনেই ডাবল সেঞ্চুরি উদযাপন করতে যাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহীম। তবে তা আটকে থাকে মাত্র ২ রানের জন্য। এরপর মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে মুশফিক নিজের নাম লেখালেন ইতিহাসের পাতায়। তবে তাকে থামতে হলো ২০০তেই। ফিরে যাবার আগে ৪৩৫ মিনিট উইকেটে পড়ে থেকে লঙ্কান বোলারদের হতাশায় ডুবিয়েছেন। ৩২১ বলে ২২ চার ও এক ছক্কায় তুলে নিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। এছাড়াও আশরাফুলের সঙ্গে ২৬৭ আর নাসিরের সঙ্গে ১০৬ রানের জুটিও গড়েন। এরপর সোহাগ গাজী আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে ফিরে যান সহজেই। তবে তখনও ক্রিজে অবিচল ছিলেন নাসির। গত বছর খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছয় রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করার ভুলটা তিনি করতে চাইলেন না। অবশেষে নাসির হোসেনের সেঞ্চুরিও এলো প্রথম বারের মতো। সেই সুবাদে এক ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি পেলো বাংলাদেশ। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে হাবিবুল বাশার ও মোহাম্মদ রফিক প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছিলেন। আর দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট। তবে এক ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি এবারই প্রথম।
অন্যদিকে গলে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা এখানেই শেষ নয়। এই গলে বাংলাদেশ ভাঙলো গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করা সর্বোচ্চ ৫৫৬ রানের রেকর্ড ইনিংসও। আর গলের মাটিতে এ পর্যন্ত পাকিস্তান যে রেকর্ড গড়ে রেখেছিল সেই রেকর্ডও ভেঙ্গে দিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ২০০০ সালে পাকিস্তান ৬০০ রান করেছিল ৮ উইকেট হারিয়ে। আর লঙ্কানরা ৫৭০ রানে ইনিংস ঘোষণার পর বাংলাদেশকে যে ফলো অনের দুঃস্বপ্ন দেখিয়েছিল তা উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা স্কোর বোর্ডে জমা করে গলের সর্বোচ্চ ইনিংস ৬৩৮ রান।