দেশের সামপ্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হিন্দু সমপ্রদায়ের ওপর হামলাসহ জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে বলে জানিয়েছেন সদ্য ওয়াশিংটন ফেরত রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। তিন সপ্তাহের সফর শেষে শনিবার ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দেন ড্যান মজিনা। গতকাল আমেরিকান সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে মিলিত হন। এসময় তিনি বলেন, ভিন্নমত প্রকাশে সহিংসতা কোন সমাধান নয়। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিতে দুঃখপ্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদই আন্দোলনের উপযুক্ত মাধ্যম। বাংলাদেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক শক্তির মত-পার্থক্য সম্পর্কে ড্যান মজিনা বলেন, এখানে সংঘাতমূলক রাজনীতি এখনও অব্যাহত রয়েছে। সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমাধানের পথ খুঁজতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ওয়াশিংটনে অবস্থানকালে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। শাহবাগ নিয়ে তাদের জানার আগ্রহ ছিল। আমি বলেছি, শান্তিপূর্ণ উপায়ে মত প্রকাশের উজ্জ্বল উদাহরণ এ শাহবাগ। এখনও বলছি, শান্ত্তিপূর্ণ যে কোন প্রতিবাদ গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ মনে করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হওয়া প্রয়োজন। তবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক অধিকার সমুন্নত রেখে সেই বিচার করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করার দাবি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ড্যান মজিনা বলেন, জামায়াত একটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল। এ দলের দু’জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। এ অবস্থায় দলটি নিষিদ্ধ হওয়া না হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষই ঠিক করবে। বাইরের লোক হিসেবে এ নিয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার দেশের সামপ্রতিক হত্যাগুলোকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বিষয়টি বিস্তারিত বিরোধী নেত্রীর কাছ থেকেই শোনার পরামর্শ দেন। গ্রামীণ ব্যাংক সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ড্যান মজিনা বলেন, প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে একজন গ্রহণযোগ্য নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত করা খুবই জরুরি। ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক বর্তমানে যতটা শক্তিশালী অতীতে কখনও এমন ছিল না মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ জানিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব গড়ে উঠছে। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে দু’ দেশের মধ্যে অংশীদারি সংলাপের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্র্রথম সংলাপটি গত সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২৭ ও ২৮শে মে ঢাকায় দ্বিতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারমেন নেতৃত্ব দেবেন। ড্যান মজিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ৩৭৮ ফুট দীর্ঘ একটি জাহাজ দেবে। আগামী ২২শে মে এই জাহাজ হস্তান্তর করা হবে। জাহাজের ক্রুদের প্রশিক্ষণ আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশের নিজস্ব সি-১৩০ বিমান রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে আরও নতুন সি-১৩০ বিমান দেবে। বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি সুবিধা এবং এ দেশের শ্রমমান নিয়ে ওয়াশিংটনে অবস্থানকালে তার আলোচনা হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেক বিষয়ই আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রশিক্ষণ আরও বিস্তৃত করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ঢাকায় এফবিআই’র স্থায়ী প্রতিনিধি নিয়োগ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মজিনা বলেন, বাংলাদেশকে অপরাধের স্থান, ব্যবস্থাপনা ও সাইবার নিরাপত্তা প্রভৃতি বহু খাতে এফবিআই সহায়তা করছে। স্থায়ীভাবে অফিস খোলা হলে এখানে একজন কর্মকর্তা থাকবেন। তার সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকজন সাহায্যকারীও থাকবেন।