২০০ কোটি টাকার ফি আরোপের উদ্যোগ

২০০ কোটি টাকার ফি আরোপের উদ্যোগ

১৫২ বছর আগে প্রবর্তিত আইন এখনও বাংলাদেশে চালু আছে। সেই আইনে নির্ধারিত হারে ফি-ও এখনও বলবৎ আছে। আইনটি হচ্ছে দি সোসাইটিস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট-১৮৬০। ১৯৩২ সালের অংশীদারী আইনের ক্ষেত্রে। এসব আইনের আওতায় এখনও বছরে চার টাকা ও পাঁচ টাকা ফি বলবৎ রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উৎস খুঁজতে গিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উদঘাটন করেছে যে, ১৫৩ বছর ধরে ফি অপরিবর্তিত রয়েছে। এখন আইন সংশোধন করে ফি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন ফি কয়েক হাজার গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দলিল পরিদর্শন, নিবন্ধন সনদ ও যে কোন দলিলের অনুলিপি সংগ্রহ, যে কোন দলিলের পরিদর্শন ফি দু’শ গুণ থেকে হাজার গুণ বাড়ছে। দি পার্টনারশিপ (এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট সংশোধনী করে সাত ধরনের ফি কয়েক শ’ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ফিস বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সংস্থান হবে।
বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হারে ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে সোসাইটি নিবন্ধন ফি ২৫০ টাকা। এটা বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যে কোন দলিল দাখিলের ফি ১০ টাকা, যে কোন দলিল পরিদর্শনের ফি ৫ টাকা, নিবন্ধন সনদের অনুলিপি জন্য ফি ১০ টাকা। এই হার বাড়িয়ে যথাক্রমে ৪০০ টাকা, ২০০ টাকা ও ২০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। যে কোন দলিলের অনুলিপি সংগ্রহের জন্য সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ফি লাগবে। বর্তমানে এই ফি ১০ টাকা। দলিলের নকল গ্রহণের জন্য প্রতি ১০০ শব্দের জন্য ৫০ পয়সা ফি দিতে হয়। এটা বাড়িয়ে ১০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যে কোন দলিল মিলিয়ে দেখার জন্য সর্বনিম্ন ৫ টাকা ফি দিয়ে প্রতি একশ’ শব্দের জন্য ৫০ পয়সা ফি দিতে হয়। এই ফিও বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও প্রতি ১০০ শব্দের জন্য ১০ টাকা ফি দিতে হবে। নিবন্ধন সনদের অনুলিপির ফি বিদ্যমান ১০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নামের ছাড়পত্রের জন্য বর্তমানে কোন ফি নেই। এক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা ফি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। কোন দলিল, বিবরণীর নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তা দাখিলের জন্য কোন ফি নেই। এক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা ফি এবং প্রত্যেক দিনের বিলম্বের জন্য ২ টাকা করে বিলম্ব ফি দিতে হবে।
সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসসমূহে প্রতিদিনই জমি-জমার দলিল সংক্রান্ত নানাবিধ কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। এজন্য মানুষকে যে পরিমাণ ফি সরকারকে দিতে হয় তার শতগুণের বেশি অর্থ ব্যয় হয় সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালচক্রের পিছনে। ফি বাড়লে বছরে ২০০ কোটি টাকারও বেশি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশে দেড় লক্ষাধিক সোসাইটি রয়েছে। নতুন সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন করতে ফি দিতে হবে ১০ হাজার টাকা। নিবন্ধিত সোসাইটিগুলো বিভিন্ন বাণিজ্যিক কার্যক্রমে জড়িত। অনেকগুলোর কোন কার্যক্রমই নেই। ফি বাড়ানোর ফলে অপ্রয়োজনীয়ভাবে সোসাইটি গড়ে তোলার প্রবণতা কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সংসদের আগামী অধিবেশনে ১৮৬০ সালের সোসাইটিস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।
অংশীদারী আইনে বিভিন্ন ফির পরিমাণ বর্তমানে ৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা। অংশীদারী আইনের আওতায় অংশীদারিত্বের ব্যবসা পরিচালিত হয়। বিদ্যমান ফির পরিমাণ বাড়িয়ে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ ও ১ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন ফি বৃদ্ধির ফলে বছরে বাড়তি ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা আসবে। এ সংক্রান্ত আইনের সংশোধনীও সংসদের আগামী অধিবেশনে আনা হবে।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য বাংলাদেশ শীর্ষ খবর