আমি খুব সাধারন জীবন যাপন করি- ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার

আমি খুব সাধারন জীবন যাপন করি- ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আমি মাসে প্রায় ৪০০ ডলার বেতন পেয়েছি। এছাড়া আমি বিভিন্ন লেকচার ও বই থেকে যে উপার্জন করেছি তার সবই ব্যবহার করেছি ইউনূস স্টোর চালাতে। আমি খুব সাধারণ জীবনযাপন করি। আমার আর কিছুর দরকার নেই। আমার পরিবার তা জানে। আমি তা-ই করি যা আমাকে সন্তুষ্ট করে। আমি খুব সাধারণ জীবন পছন্দ করি। বিলাসিতায় আমার কোন প্রয়োজন নেই। এ কথাগুলো বলেছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার একটি সাক্ষাৎকার ৯ই মার্চ প্রকাশিত হয় অনলাইন স্টার ট্রিবিউনে। এতে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- বলা হয় ১৯৮৩ সালে আপনি শুরু পৃষ্ঠা ৮ কলাম ৫
করার পর দরিদ্রদের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ এখন ৭০০ কোটি ডলার। আপনি কিভাবে ক্ষুদ্র ঋণের প্রয়োগকে ব্যাখ্যা করবেন। জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি নারীই তার নিজের জীবনের সাক্ষী। কয়েক লাখ নারী আছেন যারা এখন ভাবতে পারেন তাদের এখন আর কিছু না থাকার অনুভূতি নেই। এটাই ক্ষুদ্রঋণের শক্তি। বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণের ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। সান ফ্রান্সিসকো ও নিউ ইয়র্কে গ্রামীণ ব্যাংক আমেরিকার রয়েছে ৬০০০ ঋণগ্রহীতা। দ্রুত গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণার বিস্তার সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, আমি কখনও ভাবিনি এ ধারণা এতটা বিস্তারলাভ করবে। আমি শুধু স্থানীয়দের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। দাদন ব্যবসায়ীরা দরিদ্রদের চুষে খাচ্ছিল। আমি ভাবলাম আমার শহরের এ সমস্যা তো আমি সমাধান করতে পারি। আমি তাই মাত্র ২৭ ডলার দিয়ে শুরু করেছিলাম। এ অর্থ আমাকে ফেরত দেয়া হয়েছিল। তারপর আমি ভাবলাম কেন এ ধারণা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো না। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ ফেরত পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ শতকরা ৯৬ থেকে ৯৭ ভাগ আদায় হয়। এ বিষয়ে কোন জামিনদাতার দরকার হয় না। আমরা ঋণ আদায়ে কোন চাপ দিই না। নিউ ইয়র্ক সিটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ ফেরত দেয়ার হার শতকরা ৯৯.৬ ভাগ। তিনি বলেন, আমি গ্রামীণ ব্যাংকের শিশুদের বিষয়ে কথা বলি। এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের খবর যে শিশুরা তাদের শিক্ষা সম্পন্ন করছে। শিক্ষা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে ধনীর শিশু ও গরিবের শিশুর কোন পার্থক্য নেই। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- ক্ষুদ্রঋণের সফলতা ও গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যে দ্বন্দ্ব তার ফলে আপনাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অবসর নিতে হয়। এ সময়টাকে আপনি কিভাবে বর্ণনা করবেন এবং তাতে আপনার ওপর কি প্রভাব ফেলেছে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটা আমার কাছে দুঃখজনক অভিজ্ঞতা। কিন্তু আমি আমার কাজের মধ্যে ডুবে আছি। বাংলাদেশ ও অন্য দেশে সামাজিক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাজ চলছে। এখন আমার বয়স ৭২ বছর। তার কাছে প্রশ্ন করা হয়- আপনি এখন কিভাবে আপনার সময় ব্যয় করেন? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার জেতার পর শুরু করেছি ইউনূস সেন্টার। লোকজন আমাকে ফোন ও ই-মেইল করতে শুরু করেন। তারা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। এর সবকিছুই আমি নিজে হ্যান্ডেল করতে পারি না। তাই আমার কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মী আছেন। তারা আমাকে সহায়তা করেন। এখন আমরা জার্মানিভিত্তিক ইউনূস সামাজিক ব্যবসার মতো কর্পোরেট বাণিজ্য চালু করেছি। আগামী নভেম্বরে আমরা বাণিজ্য বিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন করতে যাচ্ছি। গত বছর আমরা ভিয়েনাতে এটা করেছি। এতে যোগ দিয়েছেন ৫০০ অতিথি। এ বছর অনুষ্ঠিত হবে কুয়ালালামপুরে। এতে যোগ দেবেন ১০০০ অতিথি।

অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক শীর্ষ খবর