সিদ্ধান্ত নিবেন এরশাদ

সিদ্ধান্ত নিবেন এরশাদ

যে কোন সময় নাটকীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি। এ ক্ষেত্রে দলটি মহাজোট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে এসে সরকার বিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিতে পারে। দলটির একজন প্রবীণ প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, ১৮ দলীয় জোটসহ সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। কয়েকদিনের মধ্যেই জাতীয় পার্টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে জানিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তিনি জানান, ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে বনিবনা না হলে ২ জোটের বাইরে থাকা ছোট ছোট দল এবং ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি স্ট্যান্ড নিতে পারে জাতীয় পার্টি। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম)-এর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং আসম আবদুর রবসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে যেসব দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তারা সবাই সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামতে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। পার্টির আরেকটি সূত্র জানায়, শাহবাগের আন্দোলনকে ভাল চোখে দেখছেন না এরশাদ। এরশাদ মনে করছেন, সরকার ইচ্ছা করেই আন্দোলনকে জিইয়ে রেখে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে।
পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, প্রধান বিরোধীদলকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে যেতে এরশাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার যে আলোচনা চলছিল তা ভেস্তে গেছে। সম্প্রতি এরশাদ একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে হোটেল সোনারগাঁওয়ে দেখা করতে গেলে প্রণব মুখার্জি তাকে বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যও হবে না। প্রণব মুখার্জির এ বক্তব্যের পর এরশাদ বিরোধী দলের নেতা হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়। জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, মহাজোটে থেকেও নানা কারণে নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না পার্টির নেতা-কর্মীরা। সরকার শুরু থেকেই মহাজোটের প্রধান এ শরিকের ওপর অবিচার করেছে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তার ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়ন করা হয়নি। কেবল নামমাত্র মন্ত্রী করা হয়েছে একজনকে। মূল্যায়ন করা হয়নি এরশাদকে। সরকারের কাছ থেকে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। পার্টির একজন যুগ্ম মহাসচিব জানান- প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু এবং নাসিম ওসমান ছাড়া গত ৪ বছরে প্রায় সব এমপিই কম-বেশি আওয়ামী হামলা, মামলা ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। এ থেকে বাদ যাননি পার্টির মহাসচিব এমবিএম রুহল আমিন হাওলাদারও। সর্বশেষ গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাজী আলাউদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের মদতদাতা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে মামলা। হাজী আলাউদ্দিনের মালিকানাধীন স্টার লাইন পরিবহনের ২টি কাউন্টারে আগুন দেয়া হয়েছে। ১টি কাউন্টার ভাঙচুর করা হয়েছে। পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, বেশ কিছুদিন ধরে হয়রানিমূলক ভাবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এইচএন শফিকুর রহমানকে। তিনি গত ১ সপ্তাহ ধরে লাপাত্তা। তার মোবাইল ফোন বন্ধ। কারও সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করছেন না। পার্টির অন্য এক নেতা জানান, শফিকুর রহমান দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। এ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি দেশে ফিরবেন না। যুগ্ম মহাসচিব হাজী আলাউদ্দিন জানান, আমার স্টার লাইন পরিবহনের ফেনী হাসপাতাল মোড় এবং ফেনীর একটি কাউন্টারে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। লুট করা হয়েছে নগদ টাকা। আমি মামলা করতে চাইলেও পুলিশ নেয়নি। প্রকারান্তরে থানার ওসি আমাকে জানিয়েছে, তার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাকে সেভ করতে পারবেন না। অন্যদিকে আমার বিরুদ্ধে দেয়া হলো মিথ্যা মামলা। এর মাধ্যমে তারা মহাজোটের অস্তিত্বকে আরও প্রশ্নবোধক করে তুললো। তিনি বলেন, আমি কেবল মুসল্লিদের সঙ্গে নামাজ শেষে মিছিলে গিয়েছিলাম। সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছি। যারা ইসলামকে অবমাননা করছে তাদের বিরুদ্ধে বলার কারণেই আমার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলো। কে বা কারা শহীদ মিনারে হামলা চালিয়েছে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বা পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দিয়েছে তা আমি জানি না। অথচ পুলিশ ৩টি মামলার মধ্যে ১টি মামলায় আমাকে প্রধান আসামি করলো। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী চরিত্রই ফুটে উঠছে।

অন্যান্য বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর