বিশ্বের ১৯৩টি রাষ্ট্রে চিঠি পাঠিয়ে দেশের সামপ্রতিক ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ এবং সরকারের অবস্থান অবহিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য এসব রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখেছেন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বেশ কয়েক দফা সংযোজন-বিয়োজনের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে চিঠিটি চূড়ান্ত করার পর বিদেশস্থ মিশন মারফত তা পাঠানো শুরু হয়েছে। মন্ত্রীর দপ্তরসহ একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ ওই চিঠিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম, চলমান মানবতাবিরোধী বিচারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, আইনি প্রক্রিয়া বিশেষ করে ‘শাহবাগ মুভমেন্ট’-এর পর এ সংক্রান্ত আইনে বড় ধরনের সংশোধনী আনয়ন, এ পর্যন্ত ঘোষিত তিনটি রায় ও তার প্রতিক্রিয়া, সর্বশেষ (গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি) জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দণ্ডাদেশকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী তার দলের কর্মী-সমর্থক-অনুরাগীদের বিক্ষোভ, সহিংসতা ও প্রাণহানি এবং তাদের মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠির সঙ্গে সাঈদীর রায়ের পর থেকে তার ভক্ত-অনুরাধীদের জ্বালাও-পোড়াও ও সহিংস আন্দোলনের বিষয়ে গত ৬ই মার্চ জাতীয় সংসদে দেয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির একটি ট্রান্সলেট (সচিত্র) সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা গতকাল বিকালে মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধে জামায়াত-শিবির শুধু দেশের ভেতরেই তৎপরতা নয়, দেশের বাইরেও তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। চলামান বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা অপপ্রচার চলাচ্ছে। সামপ্রতিক সময়ে তাদের ‘অপতৎপরতা’ অনেক বেড়ে গেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে প্রভাবিত করছে তারা বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশের তরফে ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের ‘মৃত্যুদণ্ড’ না দিতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ এসেছে।’ অপর এক কর্মকর্তা বলেন, বহির্বিশ্বে জামায়াত-শিবির মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ মোটেও যথেষ্ট নয়। নিয়মিতভাবে কিছু তথ্য-উপাত্ত পাঠানো ছাড়া বিশেষ মুহূর্তে কিছু উদ্যোগ নেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারের কোন দপ্তর-বিভাগ স্বপ্রণোদিত হয়ে তথ্য সরবরাহ করে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, এতদিনেও ট্রাইব্যুনালের কোন ওয়েবসাইট ডেভেলপ হয়নি। এ নিয়ে সরকারের কোন উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালের ‘মুখপাত্র’ না থাকা এবং নিয়মিত ব্রিফিং না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে বিচার চলাতে কোন চাপ নেই দাবি করে তিনি বলেন, এখনও কেউ বলেনি বিচার বন্ধ করতে। অনেকে বিচারের মান, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ খুঁজছে। সরাসরি না বললেও অনেকের ইঙ্গিত সে দিকেই। এ ধরনের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর রয়েছে ওই চিঠিতে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন, স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে জনদাবির প্রেক্ষিতেই বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিচার কোন প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা বা রাজনৈতিক হয়রানির জন্য নয়। বিচারটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ এবং দুনিয়াবাসীর কাছে মডেল হবে বলে চিঠিতে দাবি করেছেন তিনি।