অনেক ধৈর্য ধরেছি, আর নয়: হাসিনা

অনেক ধৈর্য ধরেছি, আর নয়: হাসিনা

যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে তিনি বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় বলেছেন, “অনেক ধৈর্য ধরেছি, আর নয়। সরকারকে এত দুর্বল ভাববেন না।

“আমরা সংঘাতে বিশ্বাস করি না ঠিক, তবে মানুষের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।”

সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাণ্ডব শুরু হয় জামায়াত-শিবিরের।

এর ফলে সৃষ্ট সহিংসতায় ৬৭ জন নিহত হয়। হামলা হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর, ট্রেনে আগুন দেয়া হয়, পোড়ানো হয় রেলস্টেশন-বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গাড়ি ও দোকানপাটও ব্যাপক ভাংচুর হয়।

বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের এই তাণ্ডবে বিএনপির স্থানীয় নেতারাও ছিলেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাবেন, মানুষ হত্যা করবেন, আর আমরা তা সহ্য করব না।”

যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে মানুষ হত্যা, দেশের সম্পদ নষ্ট করছে, তাদের মোকাবেলায় সারাদেশে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

এই কমিটিতে আলেম, ওলামা ও মসজিদের ঈমামসহ সর্বস্তরের মানুষকে অর্ন্তভুক্ত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তাণ্ডবে জড়িতদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা তৈরি করে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটিকে দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ৪২ বছর পর একাত্তরের মতো আবারো দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপিকে পাকিস্তানি ‘নয়া দালাল’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ ছাড়তে বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একাত্তরে যারা এদেশের মানুষকে হত্যা করেছে, নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের পক্ষ আপনারা কেন নেবেন? অপরাধীদের বিচার হবে, এটাই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।”

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান। এরপর তিনি মার্শাল ল জারি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেন।”

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধ ও স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী দাবি করেন, আবার স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষ অবস্থান নেন। এর জবাব কি তিনি জনগণকে দিতে পারবেন?”

সাম্প্রতিক তাণ্ডবের ফলে সৃষ্ট সহিংসতায় ৬৭ জনের প্রাণহানির দায় বিরোধীদলীয় নেত্রীকেই নিতে হবে, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়া একদিকে তাণ্ডবের নির্দেশ দিচ্ছেন, অন্যদিকে হিন্দু বাড়িঘরে হামলার জন্য সহানুভূতি জানিয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন।

“সর্প হয়ে দংশন করে, আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ছেন! চমৎকার খেলা খেলছেন তিনি।”

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ কর্মসূচি বাতিলের জন্যও বিএনপি চেয়ারপারসনের সমালোচনা করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার এই ভাষণটি বাজানো এবং শোনা হয়েছে।

“সে সময় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাকে উজ্জীবিত ও সাহস যোগাতে এই ভাষণ। আজো এ ভাষণ আমাদের প্রেরণার উৎস।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, দীপু মনি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।

অন্যান্য বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর