সহসাই তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন সফররত ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৈঠকে তিনি জানান, লোকসভায় চলতি বাজেট অধিবেশনে স্থল সীমান্ত চুক্তি-১৯৭৪ এবং সীমান্ত প্রটোকল-২০১১ পাস হবে বলে তিনি আশা করছেন। শেখ হাসিনার উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটানকে নিয়ে উপ-আঞ্চলিক সহযোগীতা ভিত রচিত হয়েছে এবং শেখ হাসিনাই উপ-আঞ্চলিক সহযোগীতার প্রথম প্রস্তাবক বলে মন্তব্য করেন ভারতের প্রেসিডেন্ট। সন্ধ্যা ৬ টায় সোনারগাঁও হোটেলের সুরমা হলে প্রণব মূখার্জির সঙ্গে সাক্ষাত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৭ টায় বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে হোটেল লবিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি। এর আগে গতকাল দুপুরে তিন দিনের সফরে ঢাকা পৌঁছান ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। পরে সেখান থেকে সরাসরি যান জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেবদন করতে।
প্রণব মুখার্জির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর দীপু মনি সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ভারতের প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে বহু দেশের যুদ্ধে ভারত সহায়তা করেছে। ভারতের বহু সৈন্য সেসব যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন। তবে বাংলাদেশের মতো এভাবে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি দেয়নি। প্রণব মূখার্জি জানিয়েছেন, তিনি এ সম্মাননা পেয়ে অভিভূত। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রণব মূখার্জি বলেন, সাহসিকতা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কারণে তিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ বেশ উন্নয়ন করেছে। এজন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি জনগণ আস্থা রেখেছে।
প্রণব মূখার্জি বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহের শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা পৌঁছে দেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, রেলমন্ত্রী মুজিুবল হক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও ড. গওহর রিজভী, এ্যাম্বেসেডর এ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মূখ্য সচিব শেখ ওয়াহিদুজ্জমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাত
আজ বিকাল ৫টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ের লাউঞ্জে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মূখার্জির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। পরে হোটেল লবিতে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানান, ভারতের এক বিলিয়ন ডলার ঋন সহায়তার মধ্যে যে ২শ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৬শ কোটি টাকা) মঞ্জুরি সহায়তা রয়েছে, তার পুরোটাই পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে। বিষয়টি ভারতের প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, আগামী মাসে আরও ৫০ মিলিয়ন ডলার ছাড় দেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি জানতে চেয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ কীভাবে নিজেরা অর্থ যোগাড় করবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সে সময় ভারতের প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছি, এ সরকার যখন দায়িত্¦ নেয় তখন ১৯ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট পেশ করা হয়। আসছে অর্থ বছরে উন্নয়ন বাজেট দাঁড়াবে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। তাই পদ্মা সেতুর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বের করা কঠিন হবে না।