জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশের চলমান সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, সরকার ও জামায়াতের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া না হলে রাজধানী ঢাকায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর দেশজুড়ে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালায়। এ সময় তাদের হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪০ জনের বেশি প্রাণ হারান।
বান কি মুন গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, বান কি মুন উদ্বেগের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় তিনি মর্মাহত। বিবৃতিতে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার একটি জাতীয় প্রক্রিয়া বলে বিবেচিত। তাই সংশ্লিষ্ট সবার উচিত আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো এবং সহিংসতা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা।
এদিকে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডব্লিউ গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ সরকার ও জামায়াতে ইসলামীর শিগগিরই এটা নিশ্চিত করা জরুরি, নিরাপত্তা বাহিনী এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা আর কোনো সহিংসতায় জড়াবেন না। বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ নিহতের ঘটনায় অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন। সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত কোনো ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার অভিযোগ অস্বীকার করলেও গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, বেশ কিছু প্রাণহানির জন্য জামায়াত-শিবির দায়ী। কয়েকটি জায়গায় মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলারও অভিযোগ উঠেছে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে।
এইচআরডব্লিউর এশিয়ার পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রায় স্বাগত জানানো ব্যক্তিদের ওপর অগ্রহণযোগ্য হামলা বন্ধ এবং সব ধরনের সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে নিজের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে শিগগিরই জামায়াতের বিবৃতি দেওয়া উচিত। একইভাবে সরকারেরও উচিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি এই নির্দেশনা জারি করা, যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ধৈর্য দেখাতে হবে। একেবারে নিরুপায় না হলে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিস্থিতি শান্ত করা সম্ভব না হলে ঢাকায় নিয়ন্ত্রণহীন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে।