আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশে সৃষ্ট সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। দেশে আইনের শাসন পুরোপুরি না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মসূচির সমালোচনা করে তারা বলেছেন, চলমান সঙ্কট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
মানবজমিনকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, যা ঘটেছে তা খুবই উদ্বেগজনক। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ও আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি পারস্পরিক সহযোগিতা না করে তাহলে সমাধান হবে না। নির্বাচন যত কাছে আসবে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারের প্রেক্ষিতে দেশে যে ঘটনা ঘটেছে তা ভয়াবহ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এত বড় ঘটনা ঘটেনি। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি আলাদা। মুক্তিযুদ্ধ তো যুদ্ধ। সেখানে প্রাণহানি ঘটবে এটা জেনেই মানুষ যুদ্ধে গিয়েছিল। কিন্তু এখন স্বাধীন দেশে বাংলাদেশীদের হাতে বাংলাদেশীরা নিহত হচ্ছে। বিশ্ব মিডিয়া তো এভাবেই দেখেছে। এতে আমাদের দেশের ইমেজ তো অবশ্যই নষ্ট হয়েছে। আদালতের বিচার একটি আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়। সাক্ষীসাবুদের মাধ্যমে বিচার হয়েছে। তাই এব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু রায় ঘোষণার পর দেশে যে এমন পরিস্থিতি হবে সে ব্যাপারে সরকার প্রস্তুত ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। আমরা দেখেছি রাজধানীতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু রাজধানীই তো আর দেশ না। ঢাকার বাইরের ব্যাপারে সরকারের প্রস্তুতি ছিল কিনা সেটাই একটা বড় প্রশ্ন। সহিংসতা আরও সহিংসতার সৃষ্টি করে বলে একটা কথা আছে। আমরা দেখেছি এই বিক্ষোভ শহর থেকে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। এসব বিষয়ে সরকার কতখানি অবগত ছিলেন? থাকলে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? গুলি করা তো সমাধান নয়। সমাধানের জন্য একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ দরকার। রাজনীতিতে পক্ষ-বিপক্ষ থাকতেই পারে। জাতীয় সঙ্কটকালে দ্রুত একটা সমঝোতার প্রচেষ্টায় আসতেই হবে রাজনীতিবিদদের। নইলে আমাদের দেশের অব্যাহত গণতন্ত্রের জন্য যে হুমকি আসবে তা কিন্তু পোষানো যাবে না। জাতীয় সমঝোতায় না আসতে পারলে অনেক বড় সমস্যা হবে। এক দুই দিনে তা সমাধান হবে বলে মনে হচ্ছে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দেশের এই পরিস্থিতির জন্য সবাই দায়ী। ট্রাইব্যুনালের যে রায় হয়েছে তাতে তো আপিলের সুযোগ আছে। কিন্তু বিচারের বিরুদ্ধে হরতাল, সন্ত্রাস করা আবার বিচারের আগে ফাঁসির দাবি করা সবই চরমপন্থা। আর বিএনপিও বড় দল হিসেবে এই অবস্থায় সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়ে একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেছে বলে আমি মনে করি। পুলিশের কথা আর কি বলবো। দেশে তো আর আইনের শাসন নেই! পুলিশকে গুলি করতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিতে হয়। তারপরও প্রথমে ফাঁকা আওয়াজ করার নিয়ম আছে। আরও কঠিন হলে, পায়ের দিকে গুলি করার কথা। কিন্তু এখন তো দেখছি সরাসরি গুলি করে মানুষ মেরে ফেলছে। দেশে আইনের শাসন হলে তো এটা হতে পারে না। বিচার হবে কোর্টে। কিন্তু তার আগেই ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই’ বলে দাবি করা হচ্ছে, আবার অপরপক্ষ বলছে কোর্টই ভেঙে দিতে হবে- এটা চরমপন্থা। এগুলো প্রমাণ করে, দেশে আইনের শাসন নেই।