ব্যয় সংকোচনের বাজেটে ওবামার স্বাক্ষর

ব্যয় সংকোচনের বাজেটে ওবামার স্বাক্ষর

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ৮৫ বিলিয়ন ডলারের ব্যয় সংকোচন বাজেটে স্বাক্ষর করেছেন। এ বাজেটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা ব্যাহত হতে পারে। কিন্তু রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা আর্থিক ঘাটতি-কমানোর বিকল্প কোন পরিকল্পনায় একমত হতে না পারায় এবং ব্যয় কাটছাঁটের বাজেট এড়াতে শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষের কোন চুক্তি না হওয়ায় ওবামা এ ব্যয় সংকোচন বাজেটে শুক্রবার অনুমোদন দিয়েছেন। ‘সিকোয়েস্টার’ বলে উল্লিখিত এ ব্যয় সংকোচন বাজেটে মার্কিন কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে ৮৫ বিলিয়ন ডলার গ্রহণ করা হবে। এ প্রক্রিয়া শনিবার থেকে আগামী ১লা অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় বাজেটে ক্রমবর্ধমান ঋণের পরিমাণ মোকাবিলা করার অংশ হিসেবে এই সিকোয়েস্টারের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছিল। ঘাটতি কমাতে বিরোধীদলীয় আইন প্রণেতারা যাতে আরও ভালো কোন বিকল্প খুঁজে বের করেন সেটা নিশ্চিত করতেই তখন এ পন্থা নেয়া হয়েছিল। মধ্য রাতের পূর্বে শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে মিলিত রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট আইন প্রণেতা এব্যাপারে কোন ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেন নি। প্রেসিডেন্ট ওবামা এ ব্যয় সংকোচনকে আরোপিত বলে উল্লেখ করে এর জন্য রিপাবলিকানদেরকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন- কয়েক সপ্তাহ বা মাস এ ব্যাপারে কাজ করলেই ঐকমত্যে পৌঁছানো যেত। ওবামা বলেন- এ ব্যয় সংকোচন আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। লোকজন বেকার হয়ে পড়বেন। এ সমস্যা মোকাবিলা করতে দু’পক্ষকেই সমঝোতা করতে হবে। দেশের ১১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট করের আওতা বাড়ানোর ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। এবিষয়টি দু’পক্ষকেই বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করে। ওবামা চেয়েছিলেন ব্যয় সংকোচন আর করের পরিমাণ বৃদ্ধি করে আর্থিক ব্যবধান কমিয়ে আনতে। কিন্তু তার এ পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে রিপাবলিকানরা। গত বছর রিপাবলিকানরা ধনীদের ওপর করের পরিমাণ বৃদ্ধি করার ওবামার প্রস্তাবের ব্যাপারে শোডাউন করলেও তাতে সফল হননি। এবারও তারা সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে আর কোন করের মাত্রা মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। প্রেসিডেন্ট আইনগত ভাবে ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নিতে বাধ্য ছিলেন। এ কারণে ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের দোদুল্যমান অর্থনীতিতে আরোপিত এ ব্যয় সংকোচনের চাপ পড়বে আর ১০ লাখ মানুষ তাদের চাকরি হারাবে। সেই সঙ্গে সামরিক বাহিনীতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে এ ব্যয় সংকোচন দেশের অর্থনীতিকে প্রবল চাপে ফেলবে এবং জাতীয় নিরাপত্তাকেও হুমকির সম্মুখীন করবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল জানিয়েছে, এ ব্যয় সংকোচনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার এ বছর ০৫ শতাংশ হ্রাস পাবার আশংকা রয়েছে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- এবারের বাজেটে ব্যয় সংকোচনের অর্থ হচ্ছে সামরিক প্রস্তুতি, বিশেষ প্রয়োজনীয় শিক্ষা কর্মসূচিসহ বেশ কিছু জরুরি সেবার ক্ষেত্রে খরচ কমানো হবে। মার্কিন সরকারই হচ্ছেন দেশের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকারী। ২৭ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সমগ্র দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছেন। বাজেট অনুযায়ী ব্যয় সংকোচন করা হলে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ৮০০,০০০ জনই এখন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মদিবসের সংখ্যা হ্রাস এবং বেতন হ্রাসের সম্মুখীন হবেন। পেন্টাগনও এখন থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের বাজেটের ১৩ শতাংশ হ্রাস করতে বাধ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হ্যাগেল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন- সিকোয়েস্টারের কারণে সামরিক বাহিনী তাদের মিশন পরিচালনায় কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। তবে সংবাদদাতারা অভয় দিয়ে বলছেন, এমন ব্যয় সংকোচন রাতারাতি ঘটবে না। আগামী সাত মাস ধরে ধীরে ধীরে এ প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। আর এর মধ্যে কংগ্রেসও দেরি না করে কোন একটি সমঝোতায় চলে আসবে বলেই মনে করছেন অনেকে।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক শীর্ষ খবর