প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেছেন, যতই চেষ্টা করেন না কেন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পারবেন না। সিঙ্গাপুরে গিয়ে তিনি এমন কি পেলেন যে দেশে এসে জামায়াতের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, আপনি কোন ভাবেই রাজাকারদের বাঁচাতে পারবেন না। বাংলাদেশ রাজাকার মুক্ত হবেই। গতকাল শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে আয়োজিত পৃথক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিকালে মাদারীপুর এ আর হাওলাদার জুট মিল মাঠে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কথা দিয়েছিলাম জনগণ আমাদের ক্ষমতা দিলে যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীদের বিচার করবো। আমরা সে কাজ শুরু করেছি আর এতেই বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীদের বাঁচানোর জন্য বাসে আগুন দিচ্ছে, মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। আন্দোলনের নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, হরতাল দিয়ে তাদের বাঁচাতে পারবেন না। তিনি জামায়াত-শিবিরকে বাঁচাতে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে হরতালের ডাক দেন। দেশে বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষা চলছে। তিনি তো ম্যাট্রিক পাস করেননি। তাই আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখুক তা তিনি চান না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। তাদের মধ্যে ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত ছিল। ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার পর জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ বন্ধ করে তাদের মুক্ত করে দেন। তাদের অনেককে দেশে-বিদেশে, রাজনীতিতে এবং চাকরিতে পুনর্বাসন করে শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি করেন। বিরোধী দলীয় নেত্রীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজ দেশে তরুণ প্রজন্ম জেগেছে, শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। শুধু তিনিই চান না।
তিনি বলেন, শিক্ষা নীতিমালায় আমরা ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ কারিগরি শিক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভোকেশনাল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি। ভূমিহীন নিঃস্বদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার শাসনামলে শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে বলেন, দেশ ’৯৬ তে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল। বর্তমান সরকারের আমলেও খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের উদ্দেশে বলেন, বিগত নির্বাচনে আপনারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি আপনাদের আশা-আকাঙক্ষা পূরণের চেষ্টা করেছি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় বসিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ করে দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশের মানুষ সুখ এবং শান্তিতে থাকে।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় মাদারীপুর এ আর হাওলাদার জুটমিল মাঠে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি’র সভাপতিত্বে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন আহম্মদ মোল্লার সঞ্চালনায় জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক
আহমদ হোসেন, আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, হুইপ নূর-ই-আলম লিটন চৌধুরী, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ড. আব্দুস সোবাহান গোলাপ, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, সৈয়দ আবুল হোসেন, আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, শাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী জনসভায় বক্তব্য দেয়ার আগে জনসভাস্থলের পাশে স্থাপিত মাদারীপুর জেলার ১৫টি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলক ডিজিটাল পদ্ধতিতে উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নদীশাসন বাঁধ, ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর ৭ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুসহ আরও ৩টি সেতু নির্মাণ, ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মাদারীপুর সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাদারীপুর হর্টিকালচার সেন্টার নির্মাণ, প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর অডিটরিয়াম ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন।
এদিকে বেলা ১১টায় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের শরীয়তপুর জেলার জাজিরা কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-এর নদী তীর প্রতিরক্ষামূলক নির্মাণ কাজ উদ্বোধন শেষে ইয়ার্ড সংলগ্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা বিদেশীদের সহায়তায় নয়, বাংলাদেশের জনগণকে নিয়েই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করবো। পদ্মা সেতুর নির্মাণে কোন প্যাকেজ ঘোষণা না করলেও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, শরীয়তপুরের মানুষ স্বাধীনতার পরবর্তী নৌকার পক্ষে ছিল। তাই এ এলাকার উন্নয়নে রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ এলাকার মানুষের উন্নয়নে সম্ভব সবকিছু করা হবে।
শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মেয়র আবদুর রব মুন্সীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী এমপি, যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম মোজাম্মেল হক, আবদুর রহমান এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ.কে.এম এনামুল হক শামীম, নাজমা আক্তার, অধ্যাপিকা অপু উকিল, নাহিম রাজ্জাক এমপি, শরীয়তপুর জেলা পরিষদ প্রশাসক মাস্টার মজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক বাহাদুর ব্যাপারী, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি ছাবেদুর রহমান (খোকা সিকদার), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ইকবাল হোসেন অপু, সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, সহ-সম্পাদক মেহেদী জামিল বক্তব্য রাখেন।