সোনার বাংলার স্বপ্ন এক দশকেই বাস্তবায়িত হতে পারে: মজীনা

সোনার বাংলার স্বপ্ন এক দশকেই বাস্তবায়িত হতে পারে: মজীনা

ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা বলেছেন, “রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে দেওয়া ৬৪ জেলা সফর করার প্রতিশ্রুতি পূরণে যখন ঘুরে বেড়াই, তখন নিশ্চিত হই বাংলাদেশ আগামীর এশিয়ান টাইগার, রয়েল বেঙ্গল টাইগার হতে প্রস্তুত। আসলেই আমাদের সবার সোনার বাংলার স্বপ্নটি কোনো সৃষ্টিশীল কল্পনার উপাত্ত নয়; এটি এমন এক স্বপ্ন যা প্রায় এক দশকেই বাস্তবায়িত হতে পারে।”

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে বেসরকারি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লব অব্যাহত থাকায় এক দশকের মধ্যেই এদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। একদা একজন বিখ্যাত ব্যক্তি বাংলাদেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ঝুড়ি, যা ধান এবং ভূমি ও সমুদ্রের সম্পদের প্রাচুর্যে উপচে পড়ছে।”

বিভিন্ন স্থান সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশের তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ, সিলেট থেকে সুন্দরবন সফর করেছি। আমি যেখানেই যাই, সেখানেই এদেশের সম্পদের প্রাচুর্য, উর্বর মাটি, পর্যাপ্ত পানি, তিনটি চাষের মৌসুম প্রদান করা উদার জলবায়ু, উপচে পড়া ধানের সমারোহ, ফল, শাকসবজি, স্তরে স্তরে মাছ, মুরগি ও মাংস, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার চমৎকার মজুদ দেখতে পাই। আর সবচেয়ে মূল্যবান আশীর্বাদ এদেশের চমৎকার মানুষ, যারা আমার জানা সবচেয়ে উদ্দমী, বৈচিত্র্যময়, সৃষ্টিশীল, উদার, উদ্যোগী ও সহনশীল মানুষ।”

বাংলাদেশকে তিনি সীমাহীন সম্ভাবনার দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেখানে প্রত্যেক পরিবারেরই ভালো, নিরাপদ আশ্রয়, পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের সুযোগ, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও ভালো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। কোনো শিশুই অপরিপূর্ণ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের শিকার হবে না।”

মজীনা বলেন, “চীনকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্ববৃহৎ তৈরিকৃত পোশাক রপ্তানিকারক হতে পারে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের মালবাহী জাহাজ ও নৌকা, ফুটওয়্যার, প্রক্রিয়াজাত চামড়াপণ্য, জেনেরিক ফার্মাসিউটিক্যালস্, হিমায়িত চিংড়ি, তথ্যপ্রযুক্তি, চীনামাটি, পাট, রেশমসহ তালিকাভুক্ত পণ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হতে পারে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রদের উদ্দেশে মজীনা বলেন, “দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং অন্যান্য দেশের সংযোগ সৃষ্টিকারী হওয়ায় এ দেশ আরো অধিক আশীর্বাদপ্রাপ্ত। এদেশের এশিয়ান টাইগার হয়ে ওঠার স্বপ্ন জাদুর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে না, কাউকে এটার বাস্তবায়ন করতে হবে। আর তা হচ্ছো তোমরা। এদেশের পর্যাপ্ত বন্দর, রাস্তা, রেলপথ তৈরি, পর্যাপ্ত জ্বালানি ও বিদ্যুত প্রদান, দুর্নীতি রোধ, আইনের শাসন শক্তিশালী, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা টেকসই করে তোলার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলোর প্রত্যেকটিই মোকাবেলা করা সম্ভব। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে স্নাতকদেরই।”

তিনি স্নাতকদের মহানূভবতা, শক্তিশালী নেতৃত্ব, নিষ্ঠা এবং নিজের প্রতি, পরিবার, জনগোষ্ঠী, জাতির প্রতি সম্মান ও বিশ্বাসের পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নতুন ও মধ্যআয়ের দেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সমাবর্তনে বিভিন্ন অনুষদের ২ হাজার ৫৬৩ ছাত্রছাত্রীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শিতা ও শিক্ষায় সর্বোত্তম ফল অর্জনকারী ছাত্রছাত্রীদের স্বর্ণপদক, একাডেমিক অ্যাওয়ার্ড ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন। এতে এআইইউবি’র ভাইস চ্যান্সেলর ড. কারমেন জেড ল্যামাগনা, এআইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষকমণ্ডলী ও অভিভাববকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর