তফসিলী ব্যাংকগুলোর নানা অনিয়ম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন মেনে না চলায় অসন্তুষ্ট গভর্নর ড. আতিউর রহমান। বেশ কয়েকবার আমানত ও ঋণের সুদের হারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হলেও সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি ব্যাংকগুলো।
চলতি বছরের মার্চের মধ্যে আমানত ও ঋণের সুদের হারের ব্যবধান ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে না আনলে উপযুক্ত রেগুলেটরি সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো দ্বিধা করবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
রোববার ব্যাংকার্স সভায় তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। ড. আতিউর রহমান বলেন, বারবার তাগিদ দেওয়ার সত্বেও ব্যাংকিং খাতে স্প্রেড এখন ৫ দশমকি ৪১ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের স্প্রেড ৭ শতাংশের ওপর। এক্ষেত্রে লেন্ডিং রেটিং ধারা ও অন্যান্য চার্জ বিষয়ে আরো গভীরভাবে বিশ্লেষন করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে রেগুলটরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঋণ অধিগ্রহণ ও গ্রহীতাদের ক্রেডিট রিস্ক নিশ্চিত না করে অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঋন প্রদান করছে অনেক ব্যাংক। এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার কথাও বলেন তিনি।
এদিকে ব্যাংক ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে গাইডলাইন করা হয়েছে তা ব্যাংকগুলো অনুসরণ করছে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ওঠে এসেছে।
এ বিষয়ে ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার বিষয়টি বেরিয়ে আসছে। অ্ভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও নীরিক্ষাজনিত দুর্বলতা ব্যাংকিং খাতের অর্থ জালিয়াতির মুখ্য কারণ।
ব্যাংকগুলো হিসাবভুক্তির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম করছে বলে জানান ব্যাংক গভর্নর। এটি ব্যাংকের আর্থিক সুস্থতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলেও জানান তিনি।
বৈঠকের পর বাংলাদেশে ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি নিয়মিত ব্যাংকারস সভা। আজকের বৈঠকে রিস্ক ম্যানেজমেন্টসহ গাইডলাইন মেনে চলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে যে চার্জ নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে তা যাতে কমিয়ে আনা যায় বা একেবারে না নেওয়া যায় সেজন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোকে অভ্যন্তরীণ বকেয়া থাকা বিল পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ যদি পরিশোধ না করে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষিত অর্থ থেকে তা পরিশোধ করা হবে। তবে হলমার্কের অপরিশোধিত অর্থ নিয়ে তেমন কোনো কথা হয়নি।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
এবিবি’র সভাপতি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নুরুল আমীন বলেন, অনেক সময় নির্দিষ্ট এক গ্রুপের কাছে লোন বেশি যায়। এটির দিকে খেয়াল রাখার কথা বলা হয়েছে মিটিংয়ে। তাছাড়া ব্যাংক গাইডলাইন অনুসরণ না করার যে অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, আমরা গাইড লাইন মানছিনা, এটা ঠিক না। কিছু কিছু ব্যাংক না মেনে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক জরিমানাও করছে।
তিনি আরও বলেন, তাছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নিয়েও নানা পরামর্শ ওঠে এসেছে। তাছড়া ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে। তাছাড়া যেসব ব্যাংকের অতিরিক্ত অর্থ আছে তা যাতে যথাযথ ব্যবহার করার যায় সেদিকে নজর দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা পরে সিদ্ধান্ত নেব।
ড. আতিউর রহমানের নেতৃত্বে ব্যাংকার্স সভা শুরু হয়েছে দুপুর ৩টায়। চলে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। এতে যোগ দেন তফসিলী ব্যাংকসমুহের প্রধান নির্বাহীরাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।