রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অনানুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বেতন কাঠামো দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আলাদা বেতন কাঠামো শিগগিরই চূড়ান্ত করতে চাইছে সরকার। আর সে কারণেই শিগগিরই তা মন্ত্রীসভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানায় সূত্রটি।
এদিকে, একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের মেয়াদে দীর্ঘ প্রায় ৩ বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আলাদা বেতন কাঠামো দেওয়ার বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো দেওয়ার বিষয়টি ঝুলে আছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে।
অপরদিকে, আলাদা বেতন কাঠামোকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি জানিয়ে এলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা এতদিন বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে, পৃথক বেতন কাঠামো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ বিরাজ করছিল ব্যাংকিং পেশাজীবীদের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, “দুর্বল বেতন কাঠামোর জন্য নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার পর কয়েক মাস কাজ না করেই উচ্চ বেতনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে চলে যান তারা। কোনোভাবেই তাদের ধরে রাখা যাচ্ছে না। অথচ তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সময়, শ্রম ও অর্থ সবই ব্যয় হচ্ছে।”
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০১০ সালের ১৮ মার্চ জাতীয় বেতন স্কেলের চেয়ে বাড়তি বেতন-ভাতা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেতন কাঠামো অনুমোদন করা হয়। তারও আগে সরকারি মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ব্যাংকের আলাদা বেতন কাঠামো তাদের পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করে।
প্রস্তাবিত স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো অনুযায়ী, একজন নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শুরুতে ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা স্কেলে বেতন পাবেন। সর্বোচ্চ ৫টি ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর একজন নির্বাহী পরিচালকের সর্বোচ্চ স্কেল হবে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি সর্বসাকুল্যে পাবেন ১ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা।
মহাব্যবস্থাপকের স্কেল ৫৮ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে শুরু। এ পদে সর্বোচ্চ ৫টি ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর সর্বোচ্চ স্কেল হবে ৭০ হাজার ৭০০ টাকা। এ পদে সর্বসাকুল্যে বেতন হবে ১ লাখ ৪ হাজার ৫০ টাকা।
উপ-মহাব্যবস্থাপকের স্কেল ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতন দিয়ে শুরু। এ পদে সর্বোচ্চ ৬টি ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর সর্বোচ্চ স্কেল হবে ৫৯ হাজার ৭০০ টাকা।
একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক সর্বসাকুল্যে বেতন পাবেন ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা।
যুগ্ম পরিচালকের স্কেল হবে ৪১ হাজার ৫০০ টাকা বেতন নিয়ে। এ পদে সর্বোচ্চ ৮টি ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর সর্বোচ্চ স্কেল হবে ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। একজন উপ-মহাব্যবস্থাপকের সর্বসাকুল্যে বেতন হবে ৭০ হাজার ২৫০ টাকা।
উপ-পরিচালকের স্কেল হবে ৩৬ হাজার টাকায়। এ পদে একজন উপ-পরিচালকের সর্বোচ্চ ১০টি ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর সর্বোচ্চ স্কেল হবে ৫৪ হাজার টাকা। সর্বসাকুল্যে একজন উপ-পরিচালক বেতন পাবেন ৬১ হাজার ১০০ টাকা।
সহকারী পরিচালকের স্কেল শুরু ১৮ হাজার টাকায়। এ পদে একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ১৬টি ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর স্কেল দাঁড়াবে ৩৩ হাজার ৬৮০ টাকা। একজন সহকারী পরিচালক সর্বসাকুল্যে বেতন পাবেন ৩৪ হাজার টাকা।
প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোয় অফিসারদের জন্য ১৩ হাজার টাকা স্কেল নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পদে সর্বোচ্চ ১৮টি ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর স্কেল দাঁড়াবে ২৯ হাজার ২০০ টাকা। একজন অফিসার সর্বসাকুল্যে বেতন পাবেন ২৬ হাজার ৯০০ টাকা। একইভাবে অন্য পদগুলোতেও বেতন ভাতা বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অর্থমন্ত্রী কয়েকবার এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে নানা কারণে এটি এখনও ঝুলে আছে।