বিশ্বনবীকে (সা.) অনুসরণেই মুক্তি

বিশ্বনবীকে (সা.) অনুসরণেই মুক্তি

 

পৃথিবীবাসীর জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য সুসংবাদের মধ্যে নিম্নের দোয়াটি কবুল হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

দোয়াটি পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে কবুল হয়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে ফেরেস্তারা দোয়াটি নিয়ে হুজুরের (সা.) কাছে পৌঁছে দেন দোয়া পাঠকারীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম ও দাদার নামসহ।

দোয়াটি হচ্ছে-
আরবি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ছল্লি আ’লা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা ছল্লাইতা আ’লা ইব্রাহিমা ওয়া আ’লা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্ মাজিদ্। আল্লাহুম্মা বারিক্ আ’লা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা বারাক্তা আ’লা ইব্রাহিমা ওয়া আ’লা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্ মাজিদ।

সহি হাদিস শরীফের আলোকে এই দরুদে ইব্রাহিম সঠিক দরুদ। তাই সালাতে আমাদের এই দরুদ পাঠ করতে হয়।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, নবীদের নবী, রাসূলদের রাসূল, আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহপাক বলেছেন, ‘তাঁকে সর্ব উত্তম চরিত্র দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে’। আল্লাহপাক স্বয়ং নবীজীর (সা.) ওপর দরুদ পাঠ করেন এবং তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন নবীজীর (সা.) ওপর দরুদ পাঠ করতে। আল্লাহপাক মহানবীকে (সা.) সৃষ্টিকূলের জন্য রহমত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পরে কিয়ামত পর্যন্ত নবুওয়াতের দরজা সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। কারণ মহানবীর (সা.) মধ্যে আল্লাহপাক কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পৃথিবীবাসীর চলার পথে কী দিক নির্দেশনা প্রয়োজন তার সবটুকু দিয়ে দিয়েছেন আর মহানবীর (সা.) ওপর নাজিল করেছেন মহাবিস্ময় আল কোরআন।

নবীজীর (সা.) ৪০ বছরের নবুওয়াতে জীবন ৩০ পারা চলন্ত কোরআন শরীফ। পাক কোরআন মহান আল্লাহপাকের কুদরতি জবানের বাণী। মাটির মধ্যে যেমন বালু মাটিকে এমন গুণ দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে সে সহজের পানিকে শুষে নিতে পারে তেমনি মানুষের সিনাকে, হৃদয়কে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে সে সহজেই মহাবিস্ময় আল কোরআন বুকে ধারণ করে রাখতে পারে, মুখস্ত করে রাখতে পারে।

আল্লাহপাক বলেছেন, ‘কোরআন আমিই নাজিল করেছি আর এর হেফাজতের দায়িত্ব আমার’। মানুষের সিনার মধ্যে পাক কোরআনকে আল্লাহ কীভাবে হেফাজত করছেন মানুষ হয়ে তা কী আমরা একটিবার ভেবে দেখেছি?

সিনা থেকে সিনায় সদা চলমান আল কোরআনের নূরে আলোকিত, দুনিয়ার দিশারী, আখেরাতের কাণ্ডারী, মহান আল্লাহপাকের সবচেয়ে প্রিয়ভাজন, যার রাজি-খুশির জন্য মহান আল্লাহপাক সবকিছুই করতে পারতেন সেই মহামানব, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফার (সা.) জন্ম ও ওফাত দিবস (১২ই রবিউল আউয়াল) ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। পৃথিবীবাসীর জন্য আজকের দিনটি যেমন মহা আনন্দের দিন, তেমনি আবার মহা বিষাদেরও।

মহানবীর (সা.) পৃথিবীতে আগমন অথাৎ জন্মগ্রহণ একজন মুসলমানের কাছে এর চাইতে বেশি আর কোনো খুশির দিন থাকতে পারে না।

দুনিয়ায় যে মতটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত তা হচ্ছে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) খ্রিষ্টাব্দ ৫৭০ সালের ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার স্মরণীয় মুহূর্তে রহমতে এলাহির ফায়সালা মোতাবেক জন্মগ্রহণ করেন। হুজুর (সা.) জন্মের পর তার মা দাদা আবদুল মোত্তালেবের কাছে পৌত্রের জন্মের সুসংবাদ পাঠান। এ খবর পেয়ে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত মনে ঘরে আসেন এবং তাঁকে কাবা ঘরে নিয়ে গিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া ও শোকর আদায় করেন। এ সময় তিনি তাঁর নাম রাখেন মোহাম্মদ। এ নাম আরবে পরিচিত ছিলো না। এরপর আরবের নিয়ম অনুযায়ী সপ্তম দিনে খতনা করান।

মায়ের পর আবু লাহাবের দাসী সুওয়ায়বা প্রথম তাঁকে দুধ পান করান। এ সময় সুওয়ায়বার কোলের শিশুর নাম ছিলো মাছরুহ। রসূলকে (সা.) দুধপান করানোর আগে সুওয়ায়বা হামজা ইবনে আবদুল মোত্তালেব, তারপরে আবু সালামা ইবনে আবদুল আসাদ মাখযুমীকেও দুধ পান করান।

পরবর্তীকালে আরবের সে সময়ের নিয়ম অনুযায়ী এ মহামানবের দুধ মা হিসেবে মা হালিমা নির্বাচিত হয়ে ভাগ্যবতী হয়ে যান। শিশু নবীকে (সা.) কোলে ঘরে নেওয়ার পথেই আল্লাহপাকের অসংখ্য রহমত নাজিল হতে থাকে হালিমার ওপর।

মহান আল্লাহপাক প্রায় সব নবীকে দিয়েই বকরি চড়িয়েছেন। এর মাজেজা মহান আল্লাহপাকই জানেন। হুজুরেপাককে (সা.) দিয়েও মহান আল্লাহপাক বকরি চড়িয়েছেন। আমরা সবাই জানি, গৃহপালিত পশুদের মধ্যে বকরি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি বেপড়োয়া। এদের লালন পালন করা মোটেই সহজ কাজ নয়। সেই কঠিন কাজ দিয়েই নবীজীর (সা.) জীবন শুরু হয়েছিল। ছোট বেলা থেকে আরবের লোকেরা তাঁকে আল-আমিন বলে ডাকতো। আল-আমিন শব্দের অর্থ হচ্ছে বিশ্বাসী। যাকে আল্লাহপাক সারা সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, তিনি আল-আমিন হবেন এটাই স্বাভাবিক।

নবুওয়াতের আগে:
দুধ ছাড়ানোর পরও শিশু মোহাম্মদ বনু সা’দ গোত্রেই ছিলেন। তাঁর বয়স যখন চার অথবা পাঁচ বছর তখন ‘বুক ফাড়ান’ ঘটনা ঘটে। সহী মুসলিম শরীফে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, হজরত জিবরাঈল (আ.) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের (সা.) কাছে আগমন করেন। এ সময় তিনি অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলা করছিলেন। জিবরাঈল (আ.) তাঁকে শুইয়ে বুক চিরে দিল বের করে তা থেকে রক্তপিণ্ড বের করে বললেন, এটা আপনার মাঝে শয়তানের অংশ। এরপর দিল একটি তশতরিতে রেখে জমজম কুপের পানি দিয়ে ধুয়ে তারপর যথাস্থানে স্থাপন করেন। ওই দিকে অন্য শিশুরা ছুটে গিয়ে তার ধাত্রীমাতা হালিমাকে বললো, মোহাম্মদকে মেরে ফেলা হয়েছে। এ কথায় পরিবারের লোকেরা ঝটপট ছুটে এসে দেখলো, তিনি বিবর্ণ মুখে বসে আছেন।

ঘটনার পর মা হালিমা ভয়ে শিশু নবীকে (সা.) তাঁর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত তিনি মায়ের সঙ্গে কাটান। নবীজী (সা.) পিতা আবদুল্লাহর কবর জিয়ারত করার উদ্দেশে মা আমেনা শিশু মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ৫০০ মাইলের রাস্তা সফর করেন। কোনো রেওয়াতে আছে, ফেরার পথে নবীজী (সা.) মাতা ইন্তেকাল করেন।

আবওয়ায় মা আমেনার ইন্তেকালের পর বৃদ্ধ আবদুল মোত্তালেব পৌত্রকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় যান। সেখানে তিনি শিশু মোহাম্মদকে (সা.) অত্যন্ত যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে লালন পালন করতে থাকেন। এর মধ্যে শিশু মোহাম্মদের চেহারার বরকতে রহমতের বৃষ্টি প্রার্থনার ঘটনা অনেকেই জানেন।

সহীহ বোখারী শরীফে হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, কাবা ঘর যখন নির্মাণ করা হয়েছিল তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাথর বহন করেছিলেন। আসমান জমিনের বুকে আল্লাহপাকের কাছে সবচেয়ে সম্মানি মানুষটি নিজে কাজ করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন শ্রমের কষ্ট ও তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করার নিয়ম কী?

হুজুর (সা.) তাঁর প্রশংসনীয় কাজ, উন্নত চরিত্র বৈশিষ্ট্য এবং দয়ার্দ্র স্বভাবের কারণে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিলেন। তিনি ছিলেন সবার চেয়ে অধিক মানবীয় সৌজন্যবোধ সম্পন্ন, সবার চেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী, সম্মানিত প্রতিবেশী, সর্বাধিক দূরদর্শিতাসম্পন্ন শাসক, সবচেয়ে অধিক সত্যবাদী, সবার চেয়ে কোমলপ্রাণ ও সর্বাধিক পবিত্র পরিচ্ছন্ন মনের অধিকারী। ভালো কাজে ভালো কথায় তিনি ছিলেন সবার চেয়ে অগ্রসর এবং অতুলনীয়। এমনকি স্বজাতির লোকেরা তাঁর নামই আল-আমিন রেখেছিলেন। তাঁর মধ্যে ছিল প্রশংসনীয় গুণ বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়। হজরত খাদিজা (রা.) তাঁর স্ত্রী সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি বিপদগ্রস্তদের বোঝা বহন করতেন, দুঃখী-দরিদ্র লোকদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতেন, মেহমানদারী করতেন এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে সাহায্য করতেন।

হুজুর (সা.) জীবনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক. মক্কী জীবন দুই. মাদানী জীবন। ইসলামের দাওয়াত তিনি প্রথম দিকে গোপনে দিয়েছেন, পরবর্তীকালে দিয়েছেন প্রকাশ্যে। নিজের পরিবার থেকে তিনি দাওয়াতের কাজ শুরু করেছিলেন। প্রকাশ্যে দাওয়াত দিতে গিয়ে তিনি কাফেরদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রক্তে ভেসে গেছে নবীজী (সা.) দেহ মোবারক। আসমানের ফেরেস্তারা অপেক্ষায় ছিলেন, কখন আল্লাহর হাবীব (সা.) বলবেন, এদের ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলবেন। কিন্তু তিনি তা না করে বরং বলেছেন, ওরা বোঝেনি, তাই আমাকে মেরেছে। তোমরা ওদের ওপর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেনা। ওদের মেরে ফেললে আমি কাদের কাছে দ্বীনের এ দাওয়াত দেবো।

স্বয়ং মহান আল্লাহপাকই ব্যস্ত থাকতেন, নবীজীকে (সা.) কীভাবে খুশি রাখা যায়।

বর্ণিত আছে, মা আয়েশা (রা.) একবার হুজুরকে (সা.) প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহর রসূল (সা.) আল্লাহপাক আপনার আগে পিছের সবগুণাহ তো মাফ করে দিয়েছেন তাহলে আপনি রাত জেগে জেগে এভাবে এতো এবাদত করে পা ফুলিয়ে ফেলেন কেন?

উত্তরে হুজুর (সা.) বলেছিলেন, ‘হে আয়শা, যে আল্লাহপাক আমার এতোবড় উপকার করলো আমি কী তাঁর শুকরিয়া আদায় করবো না?’

ইসলামের সব হুকুমগুলো এসেছে ওহির মাধ্যমে। শুধুমাত্র নামাজ ছাড়া। পবিত্র মেরাজের রাতে নবীজীকে (সা.) নিয়ে যখন হজরতে জিবরাঈল (আ.) ঊর্ধ্বগামী হয়ে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত সঙ্গে গিয়ে সেখানে নবীজীকে (সা.) রেখে বলে আসেন, এর পরে আমার আর যাওয়ার এখতিয়ার নেই। আমি যদি এর পরে যাওয়ার চেষ্টা করি তাহলে আমার নূরের ছয়শত ডানা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। তারপরও নবীজীকে (সা.) মহান আল্লাহপাক রফরফ নামক বিছানার মাধ্যমে আরশে আজিমে নিয়ে গেছেন। আল্লাহপাকের কাছে একান্ত সাক্ষাতে আল্লাহপাক আমাদের প্রিয় নবীকে (সা.) উপহার হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ দিয়েছেন। অথাৎ মেরাজে যে উপহার নিয়ে নবীজী (সা.) দুনিয়াতে ফেরত এলেন সেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমদের মধ্যে অনেক মুসলমানই আদায় করি না। অথচ এই নামাজই আমাদের জন্য মেরাজ স্বরূপ।

নবীজী (সা.) সমাজ, রাষ্ট্রকে সুন্দর করেছেন বেশি বেশি সালাম আদান প্রদানের মাধ্যমে। আমরাও যদি নিজের ঘর থেকে শুরু করে সমাজে বেশি বেশি সালাম আদান প্রদান করি তাহলে অবশ্যই আমাদের সমাজ সুন্দর হবে। শেষ জীবনে নবীজী (সা.) দুই সাহাবীর কাধের ওপর ভর করেও মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেছেন। অথচ তাঁরই উম্মত দাবি করে কত শত আজান আমার আপনার এ কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বের হয়ে যায় তবুও মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার সুযোগ পাই না। কিন্তু পৃথিবীর কেউ কী মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন? মৃত্যু আপনার আমার হবেই। এজন্য নবীজী (সা.) বেশি বেশি করে মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে বলেছেন যাতে আমরা আল্লাহ ভীরু হতে পারি।

নবীজী (সা.) আমাদের সর্ব অবস্থায় শিরক গুণাহ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। এমন কথাও বলা হয়েছে, তোমাকে যদি কেটে টুকরো টুকরো করে আগুণে জ্বালিয় দেওয়া হয় এবং সেই পুড়া ছাই নিয়ে যদি ওই পাহাড়ের চূড়ায় উড়িয়ে দেওয়া হয়, তবুও খবরদার তুমি তখনও আল্লাহর সঙ্গে শিরক করবে না। কারণ শিরক গুণাহ খাস তওবা ছাড়া কখনোই ক্ষমা করা হবে না।

শিরকের ভয়াবহ আক্রমণ সম্পর্কে হুশিয়ার করা হয়েছে এভাবে, ‘অন্ধকার রাতে কালো পোশাক পড়ে কেউ যদি কালো কোনো পাথরের ওপর বসে থাকে সেই কালো পাথর বেয়ে একটি কালো পিপীলিকা যেভাবে তার শরীর বেয়ে ওঠবে ঠিক তেমনি শিরক তোমার ভেতর এমনিভাবে প্রবেশ করবে। অতএব সাবধান। শিরক থেকে নিজেকে সর্ব অবস্থায় বাঁচিয়ে চলো।

অথচ আমরা হামেশাই বলছি, ‘এই চাকরিটা না থাকলে আমি বাঁচতে পারতাম না’ এমন কথা বলা ১০০% শিরক। রিজিক দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহপাক। বেঁচে থাকা না থাকা আল্লাহপাকেরই হাতে।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হুজুর (সা.) দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হুজুর (সা.) রাষ্ট্র প্রধান হয়ে দেখিয়ে গেছেন কীভাবে শান্তির রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করা যায়। সবচেয়ে বড় যে সম্পদ দু’টো তিনি রেখে গেছেন তা হলো- এক. আল্লাহপাকের কিতাব আল কোরআন দুই. তাঁর সুন্নাহ। এ দু’টোকে আঁকড়ে থাকলে কোনোদিনও মানুষ পথভ্রষ্ট হবে না বলেও নিশ্চয়তা দিয়ে গেছেন।

আমাদের সেই প্রিয় নবীজী (সা.) আজ শুয়ে আছেন মদিনায়। ধন্য মদিনার মাটি। এই নবীজীর (সা.) ওফাতের খবর শুনে হজরত ওমর (রা.) জ্ঞানহারা হয়ে পড়েছিলেন। তিনি দাঁড়িযে বলতে লাগলেন, কিছু কিছু মোনাফেক মনে করে, রসূলের (সা.) ওফাত হয়েছে কিন্তু আসলে তাঁর ওফাত হয়নি। তিনি তাঁর প্রতিপালকের কাছে ঠিক সেভাবে গেছেন যেভাবে হজরত মূসা ইবনে ইমরান (আ.) গিয়েছিলেন। হজরত মুসা (আ.) তাঁর কওমের কাছ থেকে চল্লিশ দিন অনুপস্থিত থাকার পর পুনরায় ফিরে এসেছিলেন। অথচ তাঁর ফিরে আসার আগে তাঁর জাতির লোকেরা বলাবলি করছিল, মুসার (আ.) ওফাত হয়েছে। আল্লাহর শপথ, রসূল (সা.) ফিরে আসবেন এবং যারা মনে করছে তিনি মারা গেছেন, তিনি তাদের হাত পা কেটে ফেলবেন। কেমন নবী প্রেমিক মানুষ ছিলেন হজরত ওমর (রা.)!

হুজুরের (সা.) দেহ মোবারক একটি ইয়েমেনি চাদর দ্বারা আবৃত ছিল। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) খবর শুনে মা আয়েশার (রা.) ঘরে প্রবেশ করেন এবং নবীজীর (সা.) কপাল মুবারকে একটি চুম্বন করে কেঁদে ওঠেন। এরপর বললেন, আমার মা বাবা আপনার ওপর কোরবান হোন, আল্লাহতায়ালা আপনার জন্য দু’টো মৃত্যু একত্রিত করবেন না। যে মৃত্যু আপনার জন্য লেখা ছিল তা হয়ে গেছে। এরপর তিনি বাইরে এসে হজরত ওমরকে (রা.) বললেন, ওমর তুমি বসে পড়ো। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রসূলের (সা.) পূজা করতো সে যেন জেনে রাখে, তাঁর ওফাত হয়েছে। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর এবাদত করতো যে যেন জেনে রাখে, আল্লাহতায়ালা চিরঞ্জীব, তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘মোহাম্মদ কেবল একজন রাসূল, তাঁর পূর্বে বহু রাসূল গত হয়ে গেছে। সুতরাং যদি তিনি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? এবং কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহর ক্ষতি করবে না; বরং আল্লাহতায়ালা শীঘ্রই কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করবেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৪)

মানসিক যন্ত্রণায় অস্থির সাহাবীরা আবু বকর সিদ্দিকের (রা.) বক্তব্য শুনে নিশ্চিত হন, প্রকৃতই রসূল (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ, কেউ যেন জানতোই না, আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এ আয়াত নাজিল করেছেন। হজরত আবু বকরের (রা.) তেলাওয়াতের পর সবাই এ আয়াত মুখস্থ করেন। সবার মুখে মুখে তখন এ আয়াত ফিরছিল।

আসুন আমরা এই পবিত্র দিনে তো বটেই প্রতিদিন অসংখ্যবার বিশ্বনবীর (সা.) ওপর দরুদ পেশ করি। মহান আল্লাহপাক বিশ্বনবীর (সা.) তাঁর পরিবারবর্গের ওপর কোটি কোটি রহমত বর্ষণ করুণ। (আমিন)

 

অন্যান্য ইসলামী জগত বিনোদন শীর্ষ খবর