সাক্ষাৎকারে বিল গেটস: আমার অর্থ দরকার নেই

সাক্ষাৎকারে বিল গেটস: আমার অর্থ দরকার নেই

উইলিয়াম হেনরি “বিল” গেটস। বিল গেটস নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি তার। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধান সফটওয়্যার নির্মাতা এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। টানা ১৩ বছর পৃথিবীর শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। কোন পর্যায়ের ধনী সেটা অনেকের ধারণার বাইরে! প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি (৬৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের সম্পদের মালিক তিনি। এই ‍অংক ইকুয়েডরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সমান, দু’টি কেনিয়ার জিডিপির সমান, তিনটি ত্রিনিদাদের ও  কয়েক ডজন মন্টিনিগ্রোর জিডিপির সমান।

১৯৫৫ সালে ওয়াশিংটনের একটি উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চকে বিয়ে করেন এই প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব।

সম্প্রতি পোলিও রোগ চিকিৎসায় ভ্যাকসিন দিতে নিজের দাতব্য তহবিলে দুই হাজার ৮০০ (২৮ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার দান করেছেন। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক নেইলি টুইডির সঙ্গে কথা বলেছেন।

টুইডির নেওয়া সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রথমেই একজন বিল গেটস হয়ে ওঠার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরে এই শীর্ষ ধনী বলেন, “শৈশব থেকেই খাদ্য ও পোশাক কেনা ছাড়া অর্থ সংগ্রহে যথেষ্ট সচেতন ছিলাম আমি। তবে অর্থ লাভের মোহ আমাকে বহুদূরের এই নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেয়নি। আমার শ্রম-নিষ্ঠাই আমাকে এতদূর এনেছে। আর এটার লাভ আমাকে একটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তারপর দরিদ্র বিশ্বে সম্পদশালী করে পাঠিয়েছে।”

গেটস বলেন, “প্রযুক্তি ও সৃষ্টিশীলতা মানুষকে অনেক দূরের লক্ষ্যে যে খুব দ্রুত পৌঁছে দেয়, তা বর্তমান সময়ই প্রমাণ করে।”

নিজেদের অর্জনের পেছনের গল্প তুলে ধরে বিল গেটস বলেন, “যারা মাইক্রোসফটে কাজ করেছে তারা দেখেছে এবং বুঝেছে। আপনি যদি সৃষ্টিশীল, পরিশ্রমী মানুষকে টেনে নেন, তবে কাজের ক্ষমতা ও নিষ্ঠা আপনাকে অনেক সুন্দর, অমূল্য এবং নাটকীয় জিনিস উপহার দেবে।”

গেটস যেখানেই গেছেন সেখানেই অর্থ ব্যয় করেছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী ও তিনি দাতব্য তহবিলে দুই হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন। এর মধ্যে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছেন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে।

‌এ ব্যাপারে গেটস বলেন, “আমার স্ত্রী ও আমি অনেক লম্বা সময় ধরে আলোচনা করেছি কিভাবে আমরা সম্পদ অর্জন করেছি, আর আমরা খুব সৌভাগ্যবান যে আমরা খুব ভালো পথে বিশ্বকে তার অধিকার বুঝিয়ে দিচ্ছি।”

দাতব্য তহবিলে অর্থ দানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে এই ধনকুবের বলেন, “পোলিওমুক্ত হওয়ার কাজে এই দান। যেটাতে শুধ আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া কিংবা পাকিস্তান নয়, আমরা সবাই ভুগছি। তাছাড়া এটা মানবতার কাজ, ঈশ্বরের কাজ!”

শিশু স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার ব্যাপারে গেটস বলেন, “এটা স্বীকার করতেই হবে যে, প্রত্যেক শিশুরই রয়েছে সুন্দর ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে জীবনযাপনের অধিকার। এ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আমাদেরই। কারণ, ওরাই একদিন পৃথিবী গড়বে।”

“কোনো ধরনের বিতর্ক আমাদের সাফল্য রথকে থামিয়ে দেবে না” উল্লেখ করে গেটস বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঈশ্বরের কাজ করতে থাকা সেইসব সেবক-সেবিকাদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছি ‍আমরা।”

ভবিষ্যৎ কাজের পরিকল্পনা তুলে ধরে গেটস বলেন, “আমি মাইক্রোসফটকে ভালোবাসি। কারণ এটা আমাকে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এই পথে আমি দেখেছে কম্পিউটার ও অনলাইন মাধ্যমের বিপ্লব। একই সঙ্গে দেখেছি একসময় প্রায় মহামারি আকার ধারণ করা শিশু মৃত্যুর হার কীভাবে সবার প্রচেষ্টায় কমে আসছে। আমি অনেক সময় ধরে কাজ করি এবং অনেক বেশি শেখার চেষ্টা করি। আমি এই কাজগুলো করে যেতে চাই, কারণ আমি এগুলো অনেক পছন্দ করি।”

বিশ্বের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রচারণার জন্য প্রত্যেকটি সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতি জোর দেন গেটস।

তাঁদের অর্জনের কারণে সন্তানদের আর কোনো কর্ম করতে হবে না এমন মন্তব্য নাকচ করে দিয়ে গেটস বলেন, “আমাদের সন্তানের‍ ঐতিহ্যগত কোনো সম্পদ পাবে না। তারা মাল্টি-বিলিয়নেয়ার হওয়া থেকে বঞ্চিত হলে সেটা তাদের ভাগ্যের দোষেই হবে। তাদের মেধা-পরিশ্রমই তাদের একদিন কোটিপতি বানিয়ে দেবে।”

গেটস বলেন, “মারা যাওয়ার ২০ বছরের মধ্যেই আমাদের উপার্জিত সম্পদের ৯৫ শতাংশ সম্পদ দাতব্য তহবিলে চলে যাবে।”

গেটস বলেন, “এটা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এটা মানবতার জন্য ঈশ্বরের কাজ!”

“নিজেদের স্বাস্থ্য চিকিৎসায় আমরা যেমন ব্যয় করি, অন্য মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতিও আমাদের তেমন ভাবা উচিৎ।”

আগামী ২৯ জানুয়ারি বিবিসিতে তারুণ্যের ধর্ম নিয়ে ‘ডিমব্লেবি লেকচার’ শীর্ষক বক্তৃতাটি সম্প্রচারিত হবে।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক