গুলিবিদ্ধ মেজর জিয়ার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত

গুলিবিদ্ধ মেজর জিয়ার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত

গুলিবিদ্ধ মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন আহমেদকে ঢাকায় না এনে খুলনা সার্জিকেল অ্যান্ড মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে তার পারিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিনের ভাগ্নে শাহানুর রহমার শামীম জানান,  শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে তাকে খুলনা সার্জিকেল অ্যান্ড মেডিকেল হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে ডা. গাজী মিজানুর রহমান তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন।

তার ভাগ্নে আরও জানান, তার কপালের ডান পাশে গুলি লেগেছে। তবে মাথার ভেতরে কোনো স্পিন্টার বা গুলি নেই। তাকে শনিবার ঢাকায় নেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যববস্থা জোরদার করা হয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশ হাসপাতালের চারপাশ ঘিরে রেখেছে।

শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাটের বঙ্গোপসাগর এলাকায় দস্যুদের গুলিতে আহত হওয়ার পর কোস্টগার্ডের একটি স্পিডবোটে করে সন্ধ্যা নাগাদ তাকে মংলায় আনা হয়। সেখান থেকে গাড়িতে করে তাকে ঢাকায় আনার কথা থাকলেও পরে খুলনা নেওয়া হয়।

তার ছোট ভাই কামাল আহম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, দুপুরে মংলা থেকে খুলনা ফেরার পথে দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াকে গুলি করে বনদস্যু মর্তুজা বাহিনী। আত্মরক্ষার্থে মেজর জিয়া ও তার সহযোগীরা পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে ৪ বনদস্যু নিহত হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, খুলনা থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরে যাওয়ার পথে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চরাপুটিয়া এলাকায় বনদস্যু মর্তুজা বাহিনী মেজর জিয়ার কার্গোতে হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে মেজর জিয়া ও তার সহযোগী জেলেরাও দস্যুদের ওপর পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় মেজর জিয়ার মাথায় গুলি লেগে তিনি গুরুতর আহত হন। দস্যুদের গুলি জিয়‍ার মাথায় বিদ্ধ হয়। এর ফলে মাথা থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণও হতে থাকে।
উভয়পক্ষের মধ্যে আধঘণ্টা ধরে গোলাগুলি চলাকালে ৪ বনদস্যু নিহত হয়েছেন বলেও জানান কামাল উদ্দিন আহমেদ।

তিনি আরও জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য মেজর জিয়াকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানোর জন্য স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরীর কাছে সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু তাদের পাঠানো হেলিকপ্টার কুয়াশার কারণে দুবলার চরে নামতে পারেনি। পরে সড়ক পথে তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে গাড়ি রওয়ানা হয়।

জেলেদের বরাত দিয়ে দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের নেতা ও জিয়ার ভাগ্নে শাহানূর রহমান শামিম  জানান, জিয়া শুক্রবার সকাল ১০টায় খুলনা থেকে মংলায় আসেন। মংলা থেকে দু’টি মিনি কার্গো (এমভি রকি রেখা ও সাখি-২) নিয়ে দুবলায় যাওয়ার সময় সুন্দরবনের ভদ্রা ও চরাপুটিয়া ফরেস্ট অফিসের মধ্যবর্তী চাউলা বগি এলাকায় দস্যু মর্তুজা বাহিনীর হামলার মুখে পড়েন। এ সময় তিনি কার্গো সাখি-২ এ অবস্থান করছিলেন।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দস্যু বাহিনী বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ শুরু করলে আত্মরক্ষার্থে জিয়া ও তার সঙ্গী জেলেরাও পাল্টা গুলি ছোড়েন। এক পর্যায়ে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হলে মর্তুজা বাহিনী পিছু হটে।

জিয়ার সঙ্গী জেলেদের দাবি, গোলাগুলি চলাকালে ৪ দস্যু গুলিবিদ্ধ হয়ে নদীতে পড়ে যান। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে গোটা সুন্দরবন জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে জেলেরা জানিয়েছেন। তারা আরও জানিয়েছেন, সাধারণ জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে জেলেদের নিরাপত্তায় কোস্টগার্ডের টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরো সুন্দরবন নিয়ন্ত্রণ করেন কিংবদন্তীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়া। বীরত্বের সঙ্গে সুন্দরবন অঞ্চলে যুদ্ধ করে তিনি ও তার বাহিনী পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের পর্যুদস্ত ও পরাজিত করেন। পুরো অঞ্চলকে মুক্ত করেন মেজর জিয়া। খ্যাতিমান মৎস্য ব্যবসায়ী মেজর জিয়া বনদস্যুদের কাছেও আতঙ্ক। এ কারণে তার ওপর বনদস্যু মর্তুজা বাহিনী হামলা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।   আরও জানা যায়, মেজর (অব.) জিয়া পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক চেয়্যাম্যান। তার বাবাও ওই পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।

অন্যান্য জেলা সংবাদ বাংলাদেশ