বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বিদেশী ক্রেতাদের তীব্র সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। ক্রেতারা তাদের আচরণবিধি রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার জন্য তারও সমালোচনা করা হয়। সমবেদনা জানানো হয় তাজরিন গার্মেন্ট ও ২০০৬ সাল থেকে এ যাবত বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি। গার্মেন্টে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা না হলে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি না করতে আহ্বান জানানো হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। গার্মেন্টে পোশাক তৈরীর আগে যেভাবে জিন্স থেকে ধুলাবালি ও ময়লা পরিষ্কার করা হয় তার সব পন্থা বাংলাদেশ সরকারের বন্ধ করা উচিত বলে দাবি করা হয়েছে। আশুলিয়ায় তাজরিন গার্মেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বুধবার এ আলোচনা করা হয় ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে। আলোচনায় অংশ নেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন সদস্য। এ সময় জিইউই/এনজিএল নামের পার্লামেন্টারি গ্রুপের সদস্য পল মারফি নিজস্ব আচরণবিধি রক্ষায় ইউরোপীয় বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার নিন্দা জানান। ওই গ্রুপের নিজস্ব ওয়েবপেইজে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিতর্কের সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে তাজরিন ফ্যাশন্স লিমিটেডে অযৌক্তিক যে ১১২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাই। একই রকম সমবেদনা জানাই ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আরও প্রায় ৭০০ নিহত শ্রমিকের পরিবারের প্রতি। তিনি এসব প্রাণহানির জন্য দায়ী করেন কারখানা মালিকদের। পাশাপাশি তিনি ইউরোপীয় বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকেও সমান দায়ী করেন। তিনি বাংলাদেশের এসব কারখানাকে ‘মৃত্যুফাঁদের কারখানা’ বলে অভিহিত করেন। পল মারফি বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ তৈরী পোশাকের রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। শুধু ২০১১ সালে এ দেশ তৈরী পোশাক রপ্তানি করে আয় করেছে ১৯০০ কোটি ডলার। এ দেশ থেকে টমি হিলফিগার, গ্যাপ, কেলভিন ক্লেইন, এইচএন্ডএম এবং ওয়ালমার্টের মতো নামকরা ব্রান্ডের প্রতিষ্ঠান পোশাক কিনেছে। এদেশে শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাদের দৈনিক আয় ১ দশমিক ২৫ ডলার। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মোট শ্রমিকের শতকরা ৮৫ ভাগই হলেন নারী। তাদের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৩৭ ডলার। তাদেরকে কোন শ্রমিক ইউনিয়ন করতে দেয়া হয় না।
শ্রমিক ইউনিয়ন করা থেকে তাদেরকে বিরত রাখতে শক্তি প্রয়োগ করা হয়। পল মারফি ডেনিম জিন্স তৈরীর সময়কার শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জিন্সের কাপড় থেকে পোশাক তৈরীর সময় তা থেকে যে বালুকণা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শ্রমিকরা গ্রহণ করেন তা থেকে তারা সিলিকোসিস ও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এসব শ্রমিককে এমন বালুকণা ও কারখানার ডাস্ট গ্রহণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে পরিবেশগত কারণে। আইরিশ ওই এমপি আরও বলেন, পোশাক তৈরীর আগে তা থেকে ধুলাবালি পরিষ্কারের যে পদ্ধতি (স্যান্ডব্লাস্টিং) আছে তার সব রকম প্রক্রিয়া বাংলাদেশ সরকারের বন্ধ করে দেয়া উচিত। যারা সিলিকোসিস (বালু-ধুলোকণা থেকে সৃষ্ট রোগবিশেষ)-এ আক্রান্ত তাদের জন্য সামাজিক ও চিকিৎসা সহায়তার সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা উচিত। তিনি আরও বলেন, যেসব কারখানায় ধুলোবালি বিমুক্ত করার জন্য শ্রমিকরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন সেখান থেকে ধুলোবালিমুক্ত জিন্সের কাপড় রপ্তানি অবশ্যই বাতিল করতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এমন একটি প্রস্তাবনা বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানোর জন্য খসড়া করা হয়েছে। ওই খসড়ার ওপর আজ ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।