জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রের গ্রহণ করে পলাতক হারিছ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা শুনানি শেষে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জহুরুল হক এই আদেশ দেন।
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বেলা ২টা ১০ এ দিকে আদালতে পৌঁছালে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। শুনানি শেষে সাড়ে ৩টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন তিনি।
শুনানির সময় খালেদা জিয়াকে একটি চেয়ারে বসানো হয়। তার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও মাহবুব উদ্দিন খোকন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল।
শুরুতে মোশারফ হোসেন কাজল অভিযোগপত্রের যৌক্তিকতা ও সংশ্লিষ্ট আইন ব্যাখ্যা করেন। তিনি অভিযোগপত্রটি সরাসরি আমলে নেয়ার জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেন।
এর বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট ট্রাস্ট। জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়নের জন্য ট্রাস্টিদের ব্যক্তিগত টাকায় এ ট্রাস্ট গঠন করা হয় । সুতরাং মামলার বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের নয়।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে জমি কেনায় ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে ২০১১ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। গত বছরের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
এ বিষয়ে খোকন আদালতে বলেন, জমির মালিক দলিলে যে টাকা দেখিয়েছেন, তার চেয়ে ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বেশি দিয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে জমির মূল্য কম দেখানো হয়।
“প্রাইভেট ট্রাস্টে যদি কোনো অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাতের ঘটনা থাকে, তবে ট্রাস্ট আইনে মামলা হতে পারত। জমির মূল্যের ব্যাপারে মামলা হতে পারতো রেজিস্ট্রেশন আইনে। দুদক আইনে নয়।”
আসামিপক্ষ চিঠির সাড়া দেয়নি বলে দুদক যে অভিযোগ করেছে, তাও অস্বীকার করেন খালেদার আইনজীবী।
তিনি বলেন, দুদকের চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিটও হয়েছে, যা বর্তমানে বিচারাধীন।
বিচারকের একটি প্রশ্নের জবাবে ব্যরিস্টার খোকন বলেন, জমির দলিলে খালেদা জিয়ার সই বা স্বাক্ষর নেই। কোনো ট্রাস্টিরও সই নেই এতে।
আসামিপক্ষে ব্যরিস্টার আমিনুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে খালেদা জিয়া ট্রাস্টকে টাকা দেননি বা কারো কাছ থেকে ট্রাস্টের তহবিলে কোনো টাকা নেননি।
অর্থ আত্মসাৎ বা অনিয়ম ঘটলে ট্রাস্টিরাই মামলা করতেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আদালত রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনতে চাইলে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, জিয়া চ্যারিটেবলের টাকা বিভিন্নভাবে আসামিদের ‘পকেটে গেছে’। চ্যারিটেবলের নামে সোনালি ব্যাংক প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় শাখায় হিসাব খোলা হয়েছে। সেই হিসাব পরীক্ষা করেই এ মামলা হয়েছে।
“১ কোটি ৩৫ লাখ এবং ৫৫ লাখ ১ কোটি ৯০ টাকার টাকার কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি খালেদা জিয়াসহ আসামিরা ।”
তার এ কথায় আদালতে উপস্থিত আসামিপক্ষের শ’ খানেক আইনজীবী হৈচৈ শুরু করলে আদালত ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে উত্তেজনা প্রশমিত হয়।
পরে আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এবং বোরহান উদ্দিনও শুনানিতে অংশ নেন।
শুনানি শেষে বিচারক অভিযোগপত্র আমলে নেন এবং পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করতে বলেন। গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলো কি না- আগামী ৩১ জানুয়ারি পুলিশকে তা জানাতে বলেছে আদালত।
নিয়ম অনুযায়ী তারপর পত্রিকায় পলাতকদের হাজির হওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। তারপর অভিযোগ গঠনের জন্য দিন রাখা হবে দিন।
খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এ মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। তার সাবেক এপিএস ও বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম খানও এ মামলার আসামি।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সময় প্রার্থনা করায় এর আগে অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার শুনানি ১৪ বার পেছানো হয়।
মঙ্গলবার শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য খালেদার আদালতে আসার খবরে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী পুরান ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীতে ‘মানবপ্রাচীর’ কর্মসূচি শেষে আদালতের উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। কর্মসূচি শেষে নেতাকর্মীদের অনেকেও আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাসও শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বিশৃঙ্খলা এড়াতে আদালত এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। পুরান ঢাকার কিছু সড়কে যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এতে পুরান ঢাকার নয়াবজার, আলুবাজার, ধোলাইপাড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকার সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।