পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং সমরাস্ত্র কেনাসহ তিনটি চুক্তি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে ছয়টি সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্ক আগামীতে নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে বলে আশা করছেন শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিন
মঙ্গলবার মস্কোর ক্রেমলিনে শীর্ষ বৈঠকে চুক্তি সইয়ের পর দুই নেতা যৌথ বিবৃতিতে এই আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তাকে (পুতিন) আশ্বস্ত করেছি যে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অব্যাহত থাকবে।”
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, “আমরা দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।”
দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে বলে আশা করেন শেখ হাসিনা।
চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে শেখ হাসিনা ও পুতিন বৈঠক করেন। চুক্তি সইয়ের পর নিজ ভাষায় বিবৃতি পড়েন পুতিন। সঙ্গে সঙ্গে তা ভাষান্তর করা হয়।
শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ আখ্যায়িত করে পুতিন দুই দেশের সম্পর্ক টেকসই করার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। তা আরো বাড়াতে হবে।
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সহযোগিতার পাশাপাশি রুশ প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, জ্বালানি উৎপাদনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার দেশ কাজ করতে আগ্রহী।
গ্যাস ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথাও বলেন পুতিন, এই ক্ষেত্রে গ্যাজপ্রমের বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিকল্পনাও জানান তিনি।
সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে দুই দেশের অভিন্ন অবস্থানের কথাও বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
রুশ প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এলে বাংলাদেশের জনগণ যেমন আনন্দিত আনন্দিত হবে, তেমনি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো গাঢ় হবে।
“আপনি এই বছর সফরের এলে আমরা অনেক আনন্দিত হব।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর লিওনাদ ব্রেজনেভের আমন্ত্রণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মস্কো সফরের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার পর চট্ট্রগ্রাম বন্দর থেকে মাইন অপসারণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাশিয়ার সহযোগিতার কথা শেখ হাসিনা উল্রেখ করেন।
দ্বিপক্ষীয় সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাই প্রথম মস্কো গেলেন।
চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা রুশ প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান।
রাশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সফরের দ্বিতীয় দিন ক্রেমলিনে যান শেখ হাসিনা। সেখানে মধ্যাহ্ন ভোজেও অংশ নেন তিনি।
ফিরোজা রঙের জমিনে গোলাপী পাড়ের শাড়ি পরা শেখ হাসিনা এবং কালো স্যুট ও সাদা শার্ট ও লাল টাই পরা পুতিনের উপস্থিতিতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছাড়াও ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানার মেয়ে আজমীনা সিদ্দিক ও আমরীনা সিদ্দিক।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরিবারের সদস্য এবং সফরসঙ্গীদের নিয়ে পুতিনের সঙ্গে ছবি তোলেন শেখ হাসিনা।
ক্রেমলিন থেকে হোটেলে ফেরার পর শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, চমৎকার আলোচনা হয়েছে।
“যারা আমাদের দুর্দিনের বন্ধু, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে ঝালাই হল। বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেল।”
তিন দিনের সফরে সোমবার সকালে মস্কো পৌঁছান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং বাংলাদেশ-রাশিয়া সহযোগিতার প্রেক্ষাপট নিয়ে বক্তৃতা দেবেন।
দুপুরে রাশিয়ার আনবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক সের্গেই কিরিয়েনকোর সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি ক্রেমলিন জাদুঘর ও গ্যাজপ্রম কার্যালয় পরিদর্শন করবেন।
বুধবার রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রীর দেশের পথে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম ওয়াহিদুজ্জামান এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন।