পরমাণু কেন্দ্রে অর্থায়নে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি

পরমাণু কেন্দ্রে অর্থায়নে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি

রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে অর্থায়নে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে রাশিয়া, যা থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।

মঙ্গলবার মস্কোর ক্রেমলিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনে সহযোগিতাসহ মোট তিনটি চুক্তি সই হয়। এছাড়া সই হয় ছয়টি সমঝোতা স্মারক।

তিনটি চুক্তির একটির আওতায় রাশিয়া থেকে সমর সরঞ্জাম কিনতে ১০০ কোটি ডলার পাবে বাংলাদেশ।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চুক্তি সইয়ের আগে ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। পরে তাদের উপস্থিতিতেই দুই দেশের কর্মকর্তারা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রস্তুতিমূলক কাজে অর্থায়নে সহযোগিতার চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ। রাশিয়ার পক্ষে সই করেন দেশটির অর্থউপমন্ত্রী সার্গেই স্তোরচাক।

এই চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি গবেষণার জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ।

বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কত খরচ হবে, তা নির্ধারণে কারিগরি গবেষণার জন্য আগামী দুই বছর এই অর্থ ব্যয় করা হবে।

পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত রাশিয়া থেকে সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে সরকার রূপপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে।

নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির মানের ওপর নির্ভর করে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুটি ইউনিটের প্রতিটি স্থাপনে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে।

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে গত নভেম্বরে রাশিয়ার পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা রোসাটমের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করে বাংলাদেশ।

ওই চুক্তি অনুয়ায়ী, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে রুশ সরকার এবং কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করবে এবং ব্যবহৃত জ্বালানিও ফেরত নেবে তারা।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ হবে ৬০ বছর। পরে তা আরো ২০ বছর তা বাড়ানো যাবে বলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ইতোপূর্বে জানিয়েছেন।

শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং রোসাটমের মহাপরিচালক এস ভি কিরেনকো একটি চুক্তি সই করেন, যার আওতায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটারে পরমাণু শিল্প তথ্য কেন্দ্র স্থাপন হবে এবং বাংলাদেশ ও রাশিয়া পরমাণু সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করবে।

প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার চুক্তির বিষয়ে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, “ সামরিক বাহিনীর জন্য বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র ক্রয়ের জন্য এক বিলিয়ন ডলারের স্টেট ক্রেডিট দিয়েছে (রাশিয়া), যাতে আমাদের বিরাট সহায়তা হবে।”

যৌথ বিবৃতিতে পুতিন সমরাস্ত্র ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।

চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের পর যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিন উভয়ই বলেন, এর মধ্য দিয়ে ঢাকা-মস্কো সম্পর্ক আগামী দিনে নতুন উচ্চতায় যাবে।

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার রাশিয়া যান প্রধানমন্ত্রী। দ্বিপক্ষীয় সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাই প্রথম মস্কো গেলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তাকে (পুতিন) আশ্বস্ত করেছি যে, বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অব্যাহত থাকবে।”

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, “আমাদের দু’দেশের সম্পর্ আরো নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।”

দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো আর্-সামাজিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখবে।

দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং সন্ত্রাস প্রতিরোধ বিষয়ে সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভারভ দুদেশের মধ্যে সন্ত্রাস প্রতিরোধে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতায় নিজ নিজ দেশের পক্ষে সই করেন।

কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি, এবং আইন, বিচার ও সংসদীয় বিষয়ে সহযোগিতার সমঝোতায় দেশের পক্ষে সই করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আর রাশিয়ার পক্ষে সই করেন কৃষিমন্ত্রী নিকোলাই ভাসিলিয়েভিচ ফিয়োদরভ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভেরোনিকা ইগোরেভনা স্কভোর্তসোভা, শিক্ষামন্ত্রী দিমিত্রি ভিক্তোরোভিচ লিভানভ, সংস্কৃতিমন্ত্রী ভ্লাদিমির রোস্তিস্লাভোভিচ মেদিনস্কি ও বিচারমন্ত্রী আলেক্সান্দার ভ্লাদিমিরোভিচ কনোভালভ।

 

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর