সাংবিধানিক সঙ্কটকে অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী: বিএনপি

সাংবিধানিক সঙ্কটকে অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী: বিএনপি

মহাজোট সরকারের চারবছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে কথামালার ফুলঝুরি আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। বিরোধী দলের নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশের সাংবিধানিক সঙ্কট ও আর্থ-সামাজিক সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে কোন দিকনির্দেশনা নেই। এ বক্তব্যে দেশবাসী আশাহত হয়েছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তব্য দেন তখন জাতি আশা করেন দেশের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা থাকবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জনগণকে নিরাশ ও আশাহত করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে সৃষ্ট দেশের দেশের সাংবিধানিক সঙ্কটকে অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতুর ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলেননি। শেয়ারবাজারে নিঃস্ব ৩৬ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর ব্যাপারে কোন বক্তব্য নেই। আনোয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী কথায় কথায় বিরোধী দলের দোষ ধরেছেন। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে। আমরা বলতে চাই- আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চায় না। এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন ঘাদানিক করে যুদ্ধাপরাধের বিচার করে তা আমাদের বাস্তবায়ন করতে বলেছিল। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে তাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। নিজেরা ক্ষমতায় এসে সে রায় বাস্তবায়ন করেনি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে এক লাখ লোককে গ্রেপ্তার ও ৩৫ হাজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে ২-৩ হাজারের বিরুদ্ধে বিচার করে মাত্র কয়েকশ’ জনকে সাজা দেয়া হয়েছিল। পরে শেখ মুজিবুর রহমান তাদেরও ছেড়ে দেন। এম কে আনোয়ার বলেন, যুদ্ধাপরাধী খুঁজতে গেলে এ সরকারেই বেশি আছে। ২০১০ সালে সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন- ’৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে বিজয়ী ৪০ জনকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারাও কি বিএনপির লোক? তাদের বিচার করেছে আওয়ামী লীগ? তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দুষছেন। আমরা পরিষ্কার বলছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে আমাদের দাবিতে সরকার সম্মতি জানালে আমরা কোন আন্দোলন করবো না। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এখন দেশবাসীর দাবি নির্দলীয় সরকার। তাদের অধীনে নির্বাচন হলে সে নির্বাচনে জনগণের ভোট পেলে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করবে। কিন্তু তারা যদি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর এতই আস্থাশীল তবে কেন ডিসিসি নির্বাচন আটকে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ করেছেন। বিদ্যুৎ খাত নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। একদিকে কুইক রেন্টাল বেড়েছে, অন্যদিকে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়েছে। বিদ্যুতের এত উৎপাদন হলে এখনও লোডশেডিং হচ্ছে কেন। দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে আমি সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। বিএনপির আমল থেকে কোন দ্রব্যের মূল্য তো কমেনি উল্টো কোন কোনটি কয়েকগুণ বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজের ও নিজের সরকারের গুণগান গাইতে গিয়ে কিছু অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন। কিছু তথ্য বিভ্রান্তি করেছেন। সামান্য কিছু সত্যও বলেছেন বটে।
বক্তব্যের ফুলঝুরিতে ধস ঠেকানো যাবে না: মঈন খান
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত ভুলে গেছেন যে, কেয়ার টেকার সরকারের স্বপক্ষে ’৯৬ সালে তার দল বাংলাদেশে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল। তখন হরতাল, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট তথা সারা দেশকে অচল করে দেয়া হয়েছিল। আজকে হঠাৎ কি হলো যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? তারা উপলব্ধি করেছে, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ভরাডুবি হবে। কাজেই এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী কি বিস্মৃত হয়েছেন, ২০০৭ সালে তিনি ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তাদের সকল অন্যায় কাজকে বৈধতা দেয়ার গ্যারান্টি দিয়েছিলেন। কাজেই তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তার বস্তুনিষ্ঠতা বিশ্লেষণ করলে কতটুকু ধোপে টিকবে সেটা বলাই বাহুল্য। ড. মঈন খান বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি এতই নিরপেক্ষ নির্বাচন করে থাকে তাহলে বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে বন্ধ করে দিয়ে করপোরেশনকে দ্বিভাগ করা হলো কেন? কাজেই গল্প-উপন্যাস ও কথামালার ফুলঝুরি দিয়ে সরকারি টেলিভিশনে বক্তৃতা দেয়া আর জনগণের ভোট পাওয়া এক কথা নয়। সরকারের জনপ্রিয়তায় যে বিরাট ধস নেমেছে তা সামপ্রতিক জরিপগুলোতে স্পষ্ট হয়েছে। বক্তৃতা দিয়ে সেটা রুখা যাবে না।

অন্যান্য বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর