২০১৫ সালের মধ্যে ২০ লাখ পরিবারের কাছে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে গ্রামীণ শক্তি। ইতিমধ্যে ১০ লাখ পরিবারের কাছে এই বিদ্যুৎসেবা পৌঁছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গ্রামীণ শক্তির ১০ লাখ পরিবারে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছানোর সাফল্য উদ্যাপন উপলক্ষে গত বুধবার এক প্রীতি সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে নতুন লক্ষ্যমাত্রার ঘোষণা দেওয়া হয়।
রাজধানীর র্যাডিসন হোটেলে এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী ও গ্রামীণ শক্তির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সমাজের বরেণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯৬ সালে গ্রামীণ শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম ১৪ বছরে পাঁচ লাখ পরিবারে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হয়। পরের দুই বছরে আর পাঁচ লাখ পরিবারে পৌঁছে সৌরবিদ্যুৎ। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রায় ৮০ লাখ লোক সুফল পাচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বলেন, মানুষকে যদি পরিবেশ দেওয়া যায়, তবে দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব সমস্যার সমাধান তারাই করতে পারবে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘প্রতি পরিবারে কেন বিদ্যুৎ পৌঁছানো যাবে না? সৌরবিদ্যুৎ এখন আমাদের সাধ্যের মধ্যে এসেছে। এক ডলারের কমে এখন সৌরবিদ্যুতের প্যানেল পাওয়া যায়। কারও ভর্তুকির জন্য বসে থাকতে হবে না।’
মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, বিদ্যুৎ হলে কি না হয়। বিদ্যুৎ দিয়ে সারা দুনিয়ায় পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ আর তথ্যপ্রযুক্তি হলে ঘরে বসেই চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়। একইভাবে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় ঘরে বসেই।
সৌরবিদ্যুৎ সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, ১৬ বছর আগে গ্রামীণ শক্তি প্রতিষ্ঠার সময় প্যানেল খরচ অনেক বেশি ছিল। আর কেরোসিনের দামও তুলনামূলক অনেক কম ছিল। এখন প্যানেলের দাম এক ডলারের নিচে এসেছে। আর কেরোসিনের দাম অনেক বেড়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় আগে দেশের বিশাল অংশ মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এখন সৌরবিদ্যুৎ চালু হওয়ায় সবাই মূলধারায় প্রবেশ করেছে। সহজেই তথ্যের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালক অ্যালেন গোল্ডস্টেইন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য প্রথম পর্যায়ে সারা বিশ্বে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে বিশ্বব্যাংক। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও দেড় কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। তাঁর মতে, বাংলাদেশ সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে সাফল্য দেখিয়েছে। এখন ছোট আকারের গ্রিড স্থাপন ও সেচকাজে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আইনুন নিশাত, গ্রামীণ শক্তির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফসার কামাল, ইডকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ মালিক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক শহীদুল ইসলাম, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এম রেজুয়ান খান প্রমুখ। এ ছাড়া সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন গাজীপুরের বিলকিস বেগম ও নরসিংদীর আওলাদ হোসেন।