কঠোর নিরাপত্তার মধ্য রাজধানীর উপকণ্ঠ টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। দেশের ৩২টি জেলার কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এরই মধ্যে ইজতেমা মাঠে এসে পৌঁছেছে।
শুক্রবার প্রথম প্রহর রাত ১২টা ০১মিনিটে আল্লাহু আল্লাহু জিকিরের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ৪৭তম বিশ্ব ইজতেমা।
এ উপলক্ষে পুরো ইজতেমা মাঠকে চার স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।
তুরাগ তীরের পুরো এলাকায় পর্যবেক্ষণের জন্য ৬টি ‘ওয়াচ টাওয়ার’।
ইজতেমা মাঠে ১২ হাজার পুলিশ সদস্য ছাড়াও সাড়ে তিন হাজার র্যাব সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।
গাজীপুর পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন বাংলানিউজকে জানায়, ‘সর্বচ্চো নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়ে ইজতেমা মাঠকে ৫টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে, ইজতেমা মাঠে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে, সেখান থেকে ৫টি সেক্টর নিয়ন্ত্রন করা হবে।
এছাড়া ৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত সকাল-বিকেল মিলে ২ পালায় ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব গোটা ইজতেমা মাঠে এরই মধ্যে ৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু করেছে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, পোশাক ধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এখানে।ৱ
৭ জানুয়ারি থেকে ইজতেমা মাঠে পুলিশের বোমা ডিসস্পোজাল ইউনিট পুরো মাঠে সুইপিং করেছে। এছাড়া যেকোনো বড় ধরনে নাশকতা ঠেকাতে স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স রাখা হয়েছে।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের কেউ অসুস্থ হয়ে পরলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের গাড়ি রাখার জন্য পর্যাপ্ত পাকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, এজন্য একটি ট্রাফিক ইউনিটও অস্থায়ীভাবে গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক মোকলেছুর রহমার বৃহস্পতিবার দুপুরে ইজতেমা মাঠ পরিদর্শন করেন, সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকছে না এখানে, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাব সদস্যরা প্রস্তুত আছে। এর আগে ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়গুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রাসিদুল হাসান।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা কোন খিত্তায় অবস্থান করবেন
প্রথম পর্বে ৩২টি জেলার মুসল্লিদের জন্য ইজতেমা ময়দানকে ৪০টি খিত্তায় (ভাগে) ভাগ করা হয়েছে। ওইসব জেলার মুসল্লিরা খিত্তাওয়ারী অবস্থান নেবেন।
১ ও ২ নম্বর খিত্তায় গাজীপুর জেলা, ৩ থেকে ১২ নম্বর খিত্তায় ঢাকা জেলা, ১৩ নম্বর খিত্তায় সিরাজগঞ্জ জেলা, ১৪ নম্বর খিত্তায়- নরসিংদী জেলা, ১৫ নম্বর খিত্তায় ফরিদপুর, ১৬ নম্বর খিত্তায় রাজবাড়ি, ১৭ নম্বর খিত্তায় শরিয়তপুর, ১৮ নম্বর খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ১৯ নম্বর খিত্তায় রংপুর, ২০ নম্বর খিত্তায় নাটোর, ২১ নম্বর খিত্তায়- শেরপুর, ২২ নম্বর খিত্তায় রাজশাহী, ২৩ নম্বর খিত্তায় গাইবান্ধা, ২৪ নম্বর খিত্তায় জয়পুরহাট, ২৫ নম্বর খিত্তায় লালমনিরহাট, ২৬ নম্বর খিত্তায় হবিগঞ্জ, ২৭ নম্বর খিত্তায় দিনাজপুর, ২৮ নম্বর খিত্তায় সিলেট, ২৯ নম্বর খিত্তায় চাঁদপুর, ৩০ নম্বর খিত্তায় ফেনী, ৩১ নম্বর খিত্তায় চট্টগ্রাম, ৩২ নম্বর খিত্তায় বান্দরবন, খাড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি, ৩৩ নম্বর খিত্তায় বাগেরহাট, ৩৪ নম্বর খিত্তায় কুষ্টিয়া, ৩৫ নম্বর খিত্তায় নড়াইল, ৩৬ নম্বর খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা, ৩৭ নম্বর খিত্তায় যশোর, ৩৮ নম্বর খিত্তায় ভোলা, ৩৯ নম্বর খিত্তায় বরগুনা এবং ৪০ নম্বর খিত্তায় ঝালকাঠি জেলার মুসল্লিরা অবস্থান নেবেন।
১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হবে।
দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৮ জানুয়ারি এবং ২০ জানুয়ারি আখেরি মেনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।