বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শ্রমিক-কর্মচারীদের রোববারের (৬ জানুয়ারি) সাতদফার আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ধর্মঘটে গড়িয়েছে। ৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ধর্মঘট শুরুর দিন সকাল ৬টা থেকেই অচল হয়ে পড়ে আকাশপথে দেশের প্রধান প্রবেশদ্বার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কয়েক হাজার বিমানযাত্রী আটকা পড়েন বিমানবন্দরে। পুরো বিমানবন্দর জুড়ে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।
এ অবস্থায় বিমানমন্ত্রী ফারুক খান ছুটে আসেন বিমানবন্দরে। সমস্যা সমাধানে আলোচনায় বসেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। বিবদমান দুই পক্ষের একটি বিমান শ্রমিক-কর্মচারীরা। অন্যপক্ষে বিমান কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক-কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলনকারীদের নেতা মশিকুর রহমান অংশ নেন বৈঠকে। কিন্তু গোল বাঁধে অন্যপক্ষকে আলোচনায় আনা নিয়ে। আরেক পক্ষে বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আহমেদ অংশ নেন আলোচনায়। সোমবার (৭ জানুয়ারি) রাতে সাত দফা নিয়ে যখন বিমানের এমডিকে প্রায় ১২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখেন শ্রমিকরা, তখনও তিনি (মোসাদ্দেক আহমেদ) কোনো সমাধান দিতে ব্যর্থ হন। আবারও সেই একই ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনায় বসা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন বৈঠকে অংশ নেওয়া দু’পক্ষই।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভরসা পাচ্ছিলেন না শ্রমিক-কর্মচারীরা, এমনকি খোদ বিমানমন্ত্রী ফারুক খানও। তাই মন্ত্রী আলোচনায় অংশ নিতে আসতে বলেন বিমানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি জামাল উদ্দিন আহমেদকে। প্রথমে বিমানের মোসাদ্দেক আহমেদকে দিয়ে জামাল উদ্দিন আহমেদকে আসতে অনুরোধ জানান মন্ত্রী। প্রথম দফায় সাড়া নেই বিমান চেয়ারম্যানের। দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ হোসেনকে দিয়ে আসার অনুরোধ জানান মন্ত্রী। এ দফায়ও চেয়ারম্যানের সাড়া মেলে না। এরপর মন্ত্রী আবার আসতে অনুরোধ জানান। এ সময় মন্ত্রী ফোনকারীকে বলতে বলেন, ‘আমি মন্ত্রী হিসেবে আসতে বলছি, উনি যেন বৈঠকে আসেন।’ কিন্তু এবারও মন্ত্রীর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন বিমানের চেয়ারম্যান।
মন্ত্রীর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান দেখে বিমান ও বেবিচকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিস্মিত হন। ওই বৈঠকে উপস্থিত বিমানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, “মন্ত্রীর অনুরোধ এভাবে কেউ প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, তা দেখে অবাক হয়েছি। আর একজন মন্ত্রীর অনুরোধ তারই মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কীভাবে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন তা-ও আমাদের বোধগম্য নয়।”
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, মন্ত্রীর পক্ষ থেকে যখন মোসাদ্দেক আহমেদ ও মাহমুদ হোসেন বিমানের চেয়ারম্যানকে আসতে অনুরোধ জানান তখন জামাল উদ্দিন আহমেদ ডিওএইচএসের বাসায় বসে ছিলেন।
বিমানের অন্য একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, “একেকবার চেয়ারম্যানের অদক্ষতার কারণে একেকটি সমস্যা তৈরি হবে; আর সেজন্য কেন প্রতিবার আমাদের দৌড়ঝাঁপ করতে হবে? যে ব্যক্তি এই ঝামেলা তৈরি করছেন তিনিই যেন নিজে মাঠে থেকে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন।”
মূলত গত বছরের মার্চে বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের জের ধরে রোববার নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠলো রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমান ও দেশের প্রধান বিমানবন্দর।
গত বছর আন্দোলনের এক পর্যায়ে শ্রমিক-কর্মকর্তা ও বৈমানিকেরা সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিমানমন্ত্রী ফারুক খান পরিষদ নেতাদের ডেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা ধর্মঘট স্থগিত করে।
আন্দোলন প্রত্যাহারের পরপরই বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিকুর রহমানকে প্রথমে শোকজ করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
মশিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিমান বাঁচাও ঐক্য পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। বিমান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, “চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দমন করতেই মশিকুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করতেই এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।”