পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ‘মিথ্যা’ দাবি করে মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেছেন, শুনানিতে তিনি নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করবেন।
গ্রেপ্তার মোশাররফ বৃহস্পতিবার নিজেই দুর্নীতি দমন কমিশনের এই মামলায় তার জামিনের আবেদনের শুনানি করেন।
ঢাকার মহানগর হাকিম এম এ সালাম সেই আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
একই মামলার আসামি সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) কাজী মো. ফেরদৌসের পক্ষে জামিন আবেদনের ক্ষেত্রেও একই আদেশ দেন বিচারক।
আদালতের অনুমতি নিয়ে সাত দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার দুজনকেই আদালতে হাজির করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল ইসলাম।
গত ১৭ ডিসেম্বর করা এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মির্জা জাহিদ আদালতে একটি তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করেন।
এতে বলা হয়, “আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আসামিদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ, কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে। আইটি বিশেষজ্ঞের দ্বারা তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।”
মোশাররফ হোসেন নিজের জামিনের আবেদন জানিয়ে বলেন, “আমার কোনো আইনজীবীর প্রয়োজন হবে না। আমি নিজেই নিজের মামলা লড়ব।”
“আমি তেত্রিশ বছর চাকরিতে আছি। আমি কোনোদিন কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যখন এ মামলা ট্রায়ালে যাবে, তখন আমি তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেব।”
“বিশ্ব ব্যাংকের সব কাগজপত্র আমার কাছে আছে। আপনি চাইলে, এখনি আমি তা দেখাতে পারি,” বিচারকের উদ্দেশে একথা বলে নিজের জামিন চান সরকারি এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “আমাকে জামিন দিলে আমি পালিয়ে যাব না।”
কাজী ফেরদৌসের আইনজীবী শাহ আলম দুই আসামির জামিন চেয়ে বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা মামলা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যও নেই।”
জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে এজহারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক এম এ সালাম দুই আসামির জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার এক সপ্তাহ পর গত ২৬ ডিসেম্বর মোশাররফ ও কাজী ফেরদৌস জামিনের জন্য হাই কোর্টে যান। তবে যে বেঞ্চে তারা গিয়েছিলেন, ওই বেঞ্চের বিচারক তাদের নিয়মিত বেঞ্চে যেতে বলেন।
এরপর সেদিনই গ্রেপ্তার হন দুজন। পরদিন ২৭ ডিসেম্বর দুজনকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পায় দুদক।
দেশের বৃহত্তম নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি লাভালিনকে পাইয়ে দেয়ার জন্য অর্থ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এই মামলা হয়েছে, যাতে আসামি করা হয়েছে সাতজনকে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশে এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, এই প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস।
বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর থেকে আটকে আছে বহু প্রতীক্ষিত এই সেতু নির্মাণের প্রকল্প। দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করার পর বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পে ফিরবে বলে সরকারের আশা।
মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, পরামর্শক নির্বাচনে মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকার কথা বিশ্ব ব্যাংকের নীতিমালায় থাকলেও তা উপেক্ষা করে ওই কমিটির আহ্বায়ক হন তিনি।
কাজী মো. ফেরদৌসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দরপত্র প্রক্রিয়ার শুরু থেকে এসএনসি লাভালিনকে গোপনীয় তথ্যাদি এবং তাদের টেন্ডার উপযোগী করার জন্য কী করতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।
এছাড়া দরপত্র প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে দেখা করার অভিযোগও আনা হয়েছে ফেরদৌসের বিরুদ্ধে। ইসমাইল বর্তমানে কানাডায় মামলায় অভিযুক্ত।