মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রস্তাবিত ফিস্কল ক্লিফ বিল পাস করেছে। এর মধ্য দিয়ে ফিস্কল ক্লিফ নিয়ে সব জল্পনার অবসান হলো। নতুন আইন অনুযায়ী ধনীদের ওপর কর বাড়বে, তবে মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন।
বিলটি কংগ্রেসে পাস না হলে সাবেক আইন অনুযায়ী ধনী-শ্রমজীবী সবার ওপরে বড় ধরনের করারোপ করা হতো এবং তাতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়ে নতুন করে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
৩১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বড় রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি ‘ফিস্কল ক্লিফ’ বা অর্থনীতির ধস ঠেকাতে কয়েকটি বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয় এবং ধনীদের ওপরে করারোপ করতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। গত সোমবার তাদের প্রস্তাবটি সিনেটে পাস হয়। সিনেটের এ বিলটি গতকাল দেশটির প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপিত হলে ২৫৭-১৬৭ ভোটে পাস হয়।
রয়টার্স জানায়, বিলটি পাস হওয়ায় মধ্য দিয়ে পক্ষান্তরে জয় হয়েছে বারাক ওবামার। দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি ধনীদের ওপরে কর বাড়িয়ে বাজেট ঘাটতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক প্রতিনিধি তাঁদের প্রথাগত করারোপবিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসে বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
সংবিধিটি পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে করারোপজনিত তাত্ক্ষণিক ঝামেলা হ্রাস পেলেও, বাজেট ঘাটতির পরিমাণ কমাতে কার্যকর উপায় এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আসছে মাসগুলোতে বাজেট নিয়ে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে দেশটির সরকার। নতুন আইন পাসে সামরিক ও কিছু উন্নয়নমূলক খাতে মাত্র ১০৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় আট লাখ ৬৯ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা) সাশ্রয় হবে। তা-ও মাত্র দুই মাসের জন্য। এরপর করারোপ নিয়ে নতুন করে আইন প্রণয়ন হতে হবে, নয়তো সাবেক আইন অনুযায়ী সবার ওপরে করের বোঝা চাপবে।
‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর খবরে বলা হয়, এ বিলটি হলো একটি স্বল্পমেয়াদি, দিকহীন সমঝোতা। বিলটি পাস না হলে, ১ জানুয়ারি থেকে প্রত্যেক মার্কিনকে কর দিতে হতো। পাস হওয়ায় এখন মাত্র ২ শতাংশ মার্কিনকে কর দিতে হবে।
সংবিধিটি পাস হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে কংগ্রেসের আইনপ্রণেতাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় আমার মূল প্রতিশ্রুতি ছিল কর-ব্যবস্থা সংস্কার করা। কারণ, এটি ধনীদের চেয়ে শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত আমেরিকানদের ওপরে বেশি চাপ তৈরি করে। আজ লক্ষ্য পূর্ণ হলো।’
গতকাল ওবামা তাঁর পরিবারসহ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। কংগ্রেসে বিলটি পাস হওয়ায় তিনি ছুটি থেকে ওয়াশিংটনে ছুটে আসেন। তবে আজ বুধবার তিনি ছুটি কাটাতে হনুলুলুতে গেছেন। ছুটিতে যাওয়ার আগে ওবামা জানান, কংগ্রেসে বারবার এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে তর্কবিতর্কে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এবং ওয়াশিংটনের কর্মপন্থা নিয়ে তিনি একটি বিকল্প পথ খুঁজছেন।
বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে, আসছে মাসে তারা ব্যয়হ্রাসের এবং ঋণের সীমা নির্ধারণের বিষয়ে বিতর্কের অবতারণা করবে।