তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে চারটি নতুন ফর্মুলা উপস্থাপন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশনকে খেলোয়াড়ের ভূমিকায় নেমে বিতর্কিত না হয়ে রেফারির ভূমিকায় থাকতে বলেছেন। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর: অপশন ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে ‘সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ (সিএফএসডি) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সংবিধান মানুষের জন্য। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। সুতরাং, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অর্থপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে তিনি চারটি প্রস্তাব পেশ করেন। ১. দু’দল থেকে পাঁচ জন করে নিয়ে ১০ জনের মন্ত্রিসভা গঠন করা। কিন্তু সরকারি দল থেকে কারা নির্বাচিত হবেন সেটা নির্ধারণ করবে বিরোধী দল। অন্যদিকে, বিরোধী দল থেকে কারা নির্বাচিত হবেন সেটা নির্ধারণ করবে সরকারি দল। ২. ’৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেরকম ছিল ওইরকম বিধান প্রণয়ন করা। কিন্তু দু’টার্মের জন্য বিধান করার আগে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিতে হবে, ৩. সংবিধান সংশোধন করে সংসদ তিন মাসের জন্য নির্বাচন করবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সরকারি ও বিরোধী দল ১০ জন করে নির্দলীয় লোক মনোনয়ন দেবে। তাদের মধ্য থেকে ৫ জন ৫ জন করে সংসদ নির্বাচিত করবে। আর দু’দলের ১০ জন মিলে একজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নির্বাচিত করবে। প্রধানকে নির্বাচিত না করতে পারলে লটারি করে নির্বাচিত করবে। ৪. উপরের তিন প্রস্তাব যদি গ্রহণযোগ্য না হয় বিরোধী দল বিএনপি তাদের প্রস্তাব দেবে। প্রস্তাবের ওপর গণভোট হবে। জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, এসব করতে সংবিধান ও আইন সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে। আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে এটা করা কোন কঠিন বিষয় নয়। তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, সংবিধানে লেখা রয়েছে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু শাসকশ্রেণী ক্ষমতাকে তাদের মৌরসী পাট্টা মনে করে। প্রধানমন্ত্রী মোঘল সম্রাটের চেয়েও বেশি ক্ষমতা ভোগ করেন। জনগণ একদিনের বাদশাহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামীতে একদিনের বাদশাহি থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনুষ্ঠানের অন্যতম আলোচক সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকারের কোন বিকল্প নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচনী আইন, আরপিও আরও সংস্কার, কার্যকর ও দায়িত্বশীল নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। বর্তমান ইসি’র নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু আইনি কাঠামো তৈরি করলে হবে না প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা, সাহসিকতাও নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সুজনের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের হিসাব-নিকাশ চাইলেও দেয়া হয়নি। নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী দলগুলোর অঙ্গ সংগঠন না থাকার কথা থাকলেও এখনও ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও বিদেশে দলের অঙ্গ সংগঠনগুলো সক্রিয়। ইসি-কে এসব অসঙ্গতির ব্যাখ্যা দিতে হবে। এছাড়া, নির্বাচন এখন টাকার খেলা, সংসদ রাজনীতিবিদ নয় ব্যবসায়ীদের আখড়া হয়ে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। গোলটেবিল আলোচনায় সিএফএসডি’র সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম আনোয়ার হাশিমের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। এর উপর আলোচনায় অংশ নেন রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি মনিরুজ্জামান মিঞা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।