সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় সম্মেলনের পর আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্মেলন করতে ব্যর্থ হলে কমিটি বাতিলের হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
শনিবার বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতে এই হুমকি দেন শেখ হাসিনা। এর সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের ১৯তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন তিনি।
বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। শুরু থেকে থেকে শেখ হাসিনা নিজেই অধিবেশন পরিচালনা করছেন।
কাউন্সিলে প্রথমে বক্তব্য রাখার সুযোগ পান মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুল আকবর। এরপর বক্তব্য রাখেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরীফ ডিলু।
পাবনার পর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন হিরণকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেন শেখ হাসিনা, গত বৃহস্পতিবার এই শাখার সম্মেলন হয়।
সম্মেলন করায় বরিশাল মহানগর কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যে সব জেলায় সম্মেলন হয়নি, সে সব জেলায় দুই মাসের মধ্যে তা করতে হবে। নইলে কমিটি ভেঙে দেয়া হবে।
সকালে উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্যে জাতীয় সম্মেলনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই সম্মেলন শুধু নিয়ম রক্ষার নয়। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে, এগিয়ে নিতে হবে এবং নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে।”
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও দলকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে আগামী দু’মাসের মধ্যে সব জেলায় সম্মেলন করার তাগিদ দেন।
শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে নেয়ার স্লোগান নিয়ে ৬৩ বছর পাড়ি দিয়ে ১৯তম জাতীয় সম্মেলন করছে আওয়ামী লীগ।
এবারের সম্মেলনে সারা দেশ থেকে যোগ দিয়েছেন ৬ হাজার ৩০০ কাউন্সিলর। কাউন্সিলরদের বাইরের যে সব নেতা-কর্মী কাউন্সিলস্থলে রয়েছে, তাদের জন্য মিলনায়তনের বাইরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর এই দলের সম্মেলন হওয়ার কথা।
এবারের সম্মেলন সফল করতে অভ্যর্থনা, প্রচার, গঠনতন্ত্র সংশোধনসহ আওয়ামী লীগের ১০টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। আড়াই হাজার স্বেচ্ছাসেবক ১১০টি দলে ভাগ হয়ে সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের, যে দলের নেতৃত্বে প্রায় দুই যুগ পর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।
প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। নতুন নাম হয়-‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম নেয় দলটি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০ এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।
তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্য ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।
এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।
এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসনে নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠন, নেতাদের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ।
১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসাবে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন, আন্দোলন শুরু করেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে।
২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবারো সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। কিন্তু দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কারচুপির মাধ্যমে তাদের হারানো হয়েছে।
এরপর দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকারে ফেরে।