নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল সংসদে তুলতে সরকারি দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, এই দাবি না মানা পর্যন্ত বিরোধী দলের আন্দোলন চলবে।
বুধবার ঢাকায় টানা সাত ঘণ্টা গণসংযোগ চালিয়ে বাড্ডায় শেষ পথসভায় তিনি বলেন, “সরকারকে বলছি, আগামী অধিবেশনে নির্দলীয় সরকারের বিল নিয়ে আসুন, আমরা সংসদে যাব। আসুন, আলোচনা করে আমরা সবাই মিলে এই বিল পাস করতে চাই।”
“আজ কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করছি না। আগামীতে কর্মসূচি দেব। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি না মানবে, কর্মসূচি তীব্র থেকে তীব্রতর হবে,” সরকারকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে গাবতলী, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও সবুজবাগে পথসভা ও বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগের পর সন্ধ্যায় বাড্ডা পৌঁছান বিরোধীদলীয় নেতা।
আদালতের এক মন্তব্য ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া যাত্রাবাড়ীর পথসভায় বলেন, ‘মাথা খারাপ’ মানুষকে ক্ষমতায় রাখা যায় না।
ওই পথসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে ‘চোরের মা’ আখ্যায়িত করে ‘দুর্নীতিবাজ সরকারের’ বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট বাঁধা নিয়ে সরকারি দলের সমালোচনার জবাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলটির নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর করমর্দনরত ছবি পথসভায় দেখান খালেদা।
তার আগে কারওয়ান বাজারের পথসভায় তিনি বলেন, তেল ও বিদ্যুতের বাড়ানো হলে বিএনপির হরতাল ডাকবে।
বাড্ডার ভাটারা মাঠে শেষ পথসভায় খালেদা বলেন, “সরকারকে স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আপনারা যদি আন্দোলন না চান, তাহলে নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিন। চার বছরে অনেক খারাপ কাজ করেছেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে একটা ভালো কাজ করুন।”
দাবি না মানলে সরকারকে ‘চরমভাবে’ বিদায় নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। “আমরা বলতে চাই, নির্দলীয় সরকারের ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। হতে দেয়া হবে না।”
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের পর এখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বললেও বিএনপি বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নিয়ে জনগণের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “তারা সাপ থেকে ভয়ঙ্কর; সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায় না।”
“রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের দল নয়। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বেঈমানি করেছে।”
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া দল বিএনপিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের দল’ বলে আখ্যায়িত করেন খালেদা, যার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীর জোট করা নিয়ে সমালোচনামুখর মহাজোট নেতারা।
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ তাদের প্রথম সরকার আমলে ৪০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ‘হত্যা’ করেছে দাবি তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আগামীতে সিরাজ সিকদারসহ ওইসব হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।”
বর্তমান সরকারের দুর্নীতিতে ‘নিমজ্জিত’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এই সরকার থাকলে দেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। লুটপাট করে সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জনগণকে এর বিরুদ্ধে আজ জেগে উঠতে হবে, বর্তমান সরকারকে হটাতে হবে।’’
গণসংযোগে জনসমাগমে সন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম পথসভায় বলেন, “মানুষের ঢল প্রমাণ করেছে, এই সরকারের প্রতি জনগণের আর কোনো আস্থা নেই। তাই আমরা দাবি জানাব, অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। নইলে গণঅভ্যুত্থানে সরকারে পতন ঘটবে।”
ঢাকা মহানগর যুগ্মআহবায়ক এম এ কাইয়ুমের সভাপতিত্বে ভাটারা মাঠের পথসভায় বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
ভাটারার পথসভা শেষ রাত ৭টার দিকে গুলশানের বাসায় ফিরে যান খালেদা জিয়া। বাড্ডার আগে বিকাল ৫টায় সবুজবাগের বাসাবো বালুর মাঠের চতুর্থ পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি।
বাসাবোর পথসভায় বক্তব্যে রাজপথ অবরোধ কর্মসূচির দিন গত ৯ ডিসেম্বর পুরনো ঢাকায় ‘ছাত্রলীগের হামলায়’ বিশ্বজিত দাসের হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারকে দায়ী করে এর বিচার দাবি করেন তিনি।
সকাল সোয়া ১১টায় গাবতলীতে পথসভার মধ্য দিয়ে গণসংযোগ শুরুর পর কারওয়ান বাজারে দ্বিতীয় পথসভা করে যাত্রাবাড়ীর ফারুক সড়কে তৃতীয় পথসভা করেন বিরোধীদলীয় নেতা।
কারওয়ান বাজারে পথ সভা করে তাঁতীবাজার-রায়সাহেব বাজার সড়ক হয়ে ধোলাইখাল এলাকায় পৌঁছান বিরোধীদলীয় নেতা। এই দীর্ঘ পথে ছিল হাজার হাজার বিএনপি সমর্থক। কর্মী-সমর্থকদের ¯্রােত ডিঙিয়ে তার গাড়িবহর পুরান ঢাকায় ঢুকতে বেশ সময় লাগে।
নির্ধারিত পথসভা না থাকলেও পুরানো ঢাকায় কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে খালেদা জিয়া তার গাড়ি থেকে নেমে খোলা একটি গাড়িতে উঠে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।