নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বুধবার ঢাকায় গণসংযোগ করবেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
গণমিছিল-সমাবেশে থাকলেও এই ধরনের কর্মসূচিতে দীর্ঘদিন দেখা যায়নি বিএনপি চেয়ারপারসনকে। একই দাবিতে জনসভা ও গণমিছিলের পর সরাসরি রাজপথে নেমে আসছেন তিনি।
গণসংযোগের অংশ হিসেবে পাঁচটি স্থানে পথসভা করবেন খালেদা জিয়া; যার শুরু হবে গাবতলী থেকে, শেষ হবে বাড্ডায়।
নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণসংযোগের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের।
বুধবারের গণসংযোগে জনতার ঢল নামবে বলে বিএনপি আশা করছে। এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে জানিয়ে তাতে সহযোগিতার আহ্বানও জানানো হয়েছে সরকারের প্রতি।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, শান্তিপূর্ণ হলে সহযোগিতা থাকবে, তবে নৈরাজ্য হলে তা-ও প্রতিরোধ করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
খালেদার গণসংযোগ কর্মসূচির আগের দিন মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, “এই কর্মসূচিতে মানুষের ঢল নামবে। এই ঢল দেখে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে- নির্দলীয় সরকারের দাবি তারা মেনে নেবে।”
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের পর এখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। এই পদ্ধতিই নির্বাচন করতে সরকার অনড় হলেও সংবিধানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।
তরিকুল বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি- সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে। কারণ এক সময়ে আমরাও নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে চাইনি। আজ আওয়ামী লীগও একই কথা বলছে। এরশাদও সারাজীবন ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগনের আন্দোলনে দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে।”
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের অনুপস্থিতে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসা তরিকুল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তিও দাবি করেন।
নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে গত ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের রাজপথ অবরোধের সময় গাড়ি ভাংচুরের একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল।
তরিকুল জানান, রাজধানীতে গাবতলী, কারওয়ান বাজার, ধোলাইখাল, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ ও বাড্ডায় পথসভা করবেন খালেদা জিয়া।
আর ১৮ দলীয় জোট নেতারা গণসংযোগ করবেন সারা দেশে। চট্টগ্রামে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সিলেটে এম কে আনোয়ার, রাজশাহীতে নজরুল ইসলাম খান, রংপুরে মাহবুবুর রহমান, খুলনায় আবদুল মঈন খান ও বরিশালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গনসংযোগ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন।
ধর্ম-বর্ণ-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে এই গণসংযোগ কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশও দেন।
৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের কর্মসূচিতে ব্যাপক গাড়ি ভাংচুর, বোমা বিস্ফোরণ হয়। সহিংসতায় নিহত হয় অন্তত তিনজন। পরে হরতালেও একই ধরনের সহিংসতা দেখা যায়।
১৮ দলীয় জোট এবং দলীয় কর্মসূচিতে সংঘাতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের ইতোপূর্বে বেশ তৎপর দেখা গেছে।
সরকারি দলের নেতারা বলে আসছেন, পরিস্থিতি ঘোলাটে করে যুদ্ধাপরাধে আটক নেতাদের বিচার আটকে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত।
রাজধানীতে গণসংযোগকালে নাগরিকদের সাময়িক অসুবিধা হতে পারে স্বীকার করে বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম বলেন, “এজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করি- নগরবাসী আমাদের সহযোগিতা করবেন।”
বিএনপির এই কর্মসূচির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার চাঁদপুরের কচুয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, “গণতান্ত্রিক অধিকার অনুযায়ী মানুষের অধিকার লঙ্ঘন না করে, মানুষের ওপর অত্যাচার না করে, হাতবোমা বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে, গাড়ি-ঘোড়া ভাংচুর না করে পথসভা করলে আমরা সমর্থন না দিলেও স্বাগত জানাব।”
তবে আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন মহীউদ্দীন খান আলমমগীর।
খালেদার গণসংযোগের রুট
বিএনপি নেতারা জানান, গাবতলীতে পথসভার মধ্য দিয়ে শুরু হবে রাজধানীতে খালেদা জিয়ার গণসংযোগ।
সকাল ১১টায় গাবতলীর পুরনো বিউটি সিনেমা হল প্রাঙ্গণে হবে প্রথম পথসভা। এরপর কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার, যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়ক, সবুজবাগের বালুর মাঠ এবং বাড্ডার ভাটারা মাঠে সভা করবেন খালেদা জিয়া।
এছাড়া পুরান ঢাকার ধোলাইখালে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি।
গাবতলীতে পথসভা করে কল্যাণপুর, আগারগাঁও সড়ক ও ফার্মগেইট হয়ে গণসংযোগ করতে করতে কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে যাবেন খালেদা জিয়া।
সেখানে পথসভা শেষে এফডিসি সড়ক হয়ে মগবাজার রেলক্রসিং, মগবাজার মোড়, রমনা থানা সড়ক, বেইলি রোড সড়ক, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট হয়ে কার্জন হল সড়ক, নগরভবন, গুলিস্থানে গোলাপ শাহ মাজার সড়ক, নর্থ সাউথ সড়ক, রায়সাবাজার সড়ক হয়ে ধোলাইখালে যাবেন তিনি।
এরপর সেখান থেকে দয়াগঞ্জ সড়ক হয়ে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে পথসভা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। সেখান থেকে সায়েদাবাদ, মানিকনগর, বৌদ্ধ মন্দির হয়ে সবুজবাগের বাসাবো বালুর মাঠে চতুর্থ পথসভা করবেন তিনি।
খালেদা জিয়া এরপর বাসাবো হয়ে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে মালিবাগ মোড়, মৌচাক, রামপুরা সড়ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস অতিক্রম করে বাড্ডার ভাটারা মাঠে সর্বশেষ পথ সভায় বক্তব্য দেবেন।
খালেদা জিয়ার দিনব্যাপী এই কর্মসূচি ইন্টারনেটে সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করেছে বিএনপি। www.bnplive.com- এই ঠিকানায় তা সবাই দেখতে পারবেন।