সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের নথি গায়েব!

সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের নথি গায়েব!

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের রুপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) শাখায় প্রায় দশঘণ্টা তল্লাশি করে কয়েকটি নথি জব্দ করলেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নথি খুঁজে পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত টিম। দুদক ধারণা করছে উপরমহলের নির্দেশে হলমার্কের ঋণ জালিয়াতির কয়েকটি নথি গায়েব হয়েছে।

দুদকের তদন্ত টিম ব্যাংকটির রুপসী বাংলা শাখার কর্মকর্তাদের নথি না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা এর সদুত্তর দিতে পারেননি।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় হলমার্কের নথি জব্দের অভিযানে নামে তদন্ত টিম। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে তল্লাশি। হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের তদন্ত কমিটির প্রধান ও জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে এ অভিযান চলে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবু হাশেম বলেন, ‘‘দুদক যেসব তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে তা সাধ্যমতো সরবরাহ করেছি।’’

নথি না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যবস্থাপক হিসেবে এখানে নতুন। আগের কোনো ফাইল না পেলে তা আমার জানা থাকার কথা নয়। আমি কর্মরত অবস্থায় এ সংক্রান্ত যা ছিল তা দুদককে দিয়েছি।’’

এদিকে তদন্ত টিমের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘ধারণা করা হচ্ছে তানভীর মাহমুদ (হলমার্কের কর্ণধার) গ্রেফতার হওয়ার পর পরই কিছু ফাইল এ শাখা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এটা হয়েছে এমন আভাস পাচ্ছি।’’

দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে নজিরবিহীন ঋণ জালিয়াতি করে হলমার্ক। সোনালী ব্যাংকের এ শাখা থেকেই গ্রুপটি ২৬শ’ কোটি টাকা ভুয়া এলসির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।

এ শাখায় অভিযানে থাকা অবস্থায় তদন্ত টিমের প্রধান শিবলী বলেন, ‘‘রূপসী বাংলা শাখা থেকেই হলমার্ক ব্যাংকিং সেক্টরের বড় কেলেঙ্কারি ঘটায়। হলমার্ক সংক্রান্ত যত নথি আছে আমরা সেগুলো জব্দ করতে নেমেছি। এরইমধ্যে (সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত) কয়েকটি নথি জব্দ করেছি।’’

সরকারি ছুটির দিনের জব্দের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘অন্য দিন ব্যাংকের গ্রাহক থাকে। ছুটির দিন ছাড়া জব্দ করতে এলে ব্যাংকের গ্রাহকদের এবং কর্মকর্তাদের স্বাভাবিক কাজ করতে অসুবিধা হবে বিবেচনা করেই সরকারি ছুটির দিনে (বড়দিন) জব্দের অভিযানে নেমেছে দুদক।’’

গত ৪ অক্টোবর হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ ও সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও ডিজিএম (সাময়িক বরখাস্ত) একেএম আজিজুর রহমানকে আসামি করে ২৭ জনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা দায়ের করে দুদক।

২৭ জনের মধ্যে হলমার্কের ৭ ও সোনালী ব্যাংকের ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ মামলার প্রধান আসামি তানভীর ও তুষার মিরপুর থেকে ৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন। ১৪ অক্টোবর রমনা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আজিজুর এবং ১৮ নভেম্বর মানিকগঞ্জ থেকে তানভীরের স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে র‌্যাব ও দুদকের বিশেষ টিম গ্রেপ্তার করে।

এ ৪ আসামি রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে তানভীর, তুষার ও আজিজ আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মীর মহিদুর রহমান (ওএসডি) ও সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন ও সফিজউদ্দিন আহমেদকে আটক করে দুদক।

এ চার কর্মকর্তা বর্তমানে দুদকের রিমান্ডে । হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এ পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের চার কর্মকর্তা ও হলমার্কের ৩ কর্তাসহ মোট সাতজন গ্রেফতার হয়েছেন। দুদক জানায়, বাকি আসামিদের ধরতে গ্রেফতার অভিযান চলছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে হলমার্ক মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে পরিশোধিত (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য বাংলাদেশ শীর্ষ খবর