চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ দাশ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এমদাদুল হককে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার গভীর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার স্বপ্নপুরি নামক এক রেস্টহাউজ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত এ নিয়ে ৭ জনকে আটক করা হলো। আরও ৪ জনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৩ জন বিশ্বজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের মধ্যে ৩ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এছাড়াও এই ঘটনায় মোট ২০/২১জনকে সনাক্ত করা হয়েছে।
এমদাদকে বিশ্বজিৎ হত্যার সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত বলে সনাক্ত করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
এমদাদের গ্রেফতার নিয়ে মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণের ডিসি মনিরুল ইসলাম, মিডিয়া সেন্টারের ডিসি মাসুদুর রহমান ও এডিসি নূরুন্নবি।
সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় সীমান্ত পথে ভারতে পালানোর প্রস্তুতিকালে স্বপ্নপুরি নামক একটি রেস্টহাউজ থেকে এমদাদকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত এমদাদের বাড়ি যশোর জেলার শার্শা উপজেলার পাঁচকাইবা গ্রামে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০-২০১১ সেশনে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতোকত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্বজিৎ হত্যায় সম্পৃক্ততা প্রকাশের পর তার সনদ বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়।
মনিরুল ইসলাম জানান, ঘটনার পরপরই প্রাপ্ত ভিডিওচিত্র এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এমদাদকে সনাক্তের পর তাকে গ্রেফতারের জন্য ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি গ্রেফতার এড়াতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন।
তিনি বলেন, “বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০/২১ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে এমদাদকে দিয়ে মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৩জন স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ৩ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”
মনিরুল বলেন, “এমদাদকে রিমান্ডের আবেদন করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে।”
উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন টেইলারিং ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাশ। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর মশুরা গ্রামে।
পুলিশ এ পর্যন্ত এ মামলায় আরো ৬ জনকে গ্রেফতার ও ৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী সনাক্ত করা ৬ জনকে পুলিশ ৮ দিন করে রিমান্ডে নেয়।
তারা হচ্ছেন, রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, কাইয়ুম মিয়া টিপু, এইচএম কিবরিয়া, জিএম রাশেদুজ্জামান ও সাইফুল ইসলাম। অন্যদিকে ৪ জন মামুনুর রশিদ, ফারুক হোসেন, কাজী নাহিদুজ্জামান ও মোসলেউদ্দিন মোসলেমকে আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ড শেষে গত রোববার গ্রেফতারকৃত আসামি শাকিল, শাওন ও নাহিদকে আদালতে হাজির করা হলে তারা এ হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এদিকে ভিডিও ফুটেজ অনুয়ায়ী সনাক্ত করা ওবায়দুল কাদের, মীর মোহাম্মদ নুরে আলম লিমন, ইউনুছ, তাহসিন, জনি ও শিপলুকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেননি পুলিশ-ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে তাদের গ্রেফতারে পুলিশ ও ডিবির সমন্বয়ে অভিযান চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
৯ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই দিনই সূত্রাপুর থানায় ২৫ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন থানার এসআই জালাল আহমেদ। একই থানার এসআই মাহবুবুল আলম মামলাটি তদন্ত করছেন।
১৩ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবী ঢাকার সিএমএম আদালতে আরেকটি মামলা করেন। আদালতে করা মামলায় ১০ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- মাহফুজুর রহমান নাহিদ, রফিকুল ইসলাম শাকিল, মোঃ এমদাদুল হক, ওবায়দুল কাদের, মীর মোহাম্মদ নুরে আলম লিমন, ইউনূছ, তাহসিন, জনি, শিপলু ও কিবরিয়া। এছাড়া মামলায় আরো অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামিরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কবি নজরুল ইসলাম কলেজের ছাত্র।
১২ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ হত্যায় জড়িত রফিকুল ইসলাম শাকিল, মীর মোহাম্মদ নুরে আলম লিমন ও ওবায়দুল হককে স্থায়ী বহিষ্কার এবং মাহফুজুর রহমান নাহিদ ও মোঃ এমদাদুল হকের সনদ বাতিল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২১ ডিসেম্বর মোঃ কাইয়ূম মিয়া টিপু, রাজন তালুকদার, মোঃ সাইফুল ইসলাম, এবং জি এম রাশেদুজ্জামান শাওনকেও বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত ও সনদ বাতিল হওয়া সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ছবির আলোকে এবং প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এক জরুরি সভায় এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় আইন-শৃঙ্খলা কমিটি ও প্রক্টরিয়াল বডি।