রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের সব নথিপত্র জব্দের অভিযানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) শাখায় হলমার্কের নথি জব্দের অভিযানে নামে দুদকের তদন্ত টিম। বেলা ২টা পর্যন্ত তাদের নথিপত্র জব্দ করতে দেখা গেছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের তদন্ত কমিটির প্রধান ও জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে এ অভিযান চলছে।
দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে নজিরবিহীন ঋণ জালিয়াতি করে হলমার্ক। সোনালী ব্যাংকের এ শাখা থেকেই গ্রুপটি ২৬শ’ কোটি টাকা ভুয়া এলসির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।
বাংলানিউজকে শিবলী বলেন, “রূপসী বাংলা শাখা থেকেই হলমার্ক ব্যাংকিং সেক্টরের বড় কেলেঙ্কারি ঘটায়। হলমার্ক সংক্রান্ত যত নথি আছে আমরা সেগুলো জব্দ করতে নেমেছি। এরইমধ্যে (সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত) কয়েকটি নথি জব্দ করেছি। আরও করবো।“
সরকারি ছুটির দিনের জব্দের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অন্য দিন ব্যাংকের গ্রাহক থাকে। ওই সময় জব্দ করতে এলে তখন গ্রাহকদের অসুবিধা হয়। ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও কাজ করতে অসুবিধা হয়, এসব কারণেই মূলত সরকারি ছুটির দিনে জব্দের অভিযানে নামা।“
জব্দের অভিযানে নামা দুদক টিম মনে করছে, তদন্তে অগ্রগতিমুলক নথিপত্র পাওয়া যাবে সোনালী ব্যাংকের এ শাখা থেকে। জানা গেছে, বেলা ২টা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ২০টি নথি জব্দ করেছে দুদক।
গত ৪ অক্টোবর হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ ও সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও ডিজিএম (সাময়িক বরখাস্ত) একেএম আজিজুর রহমানকে আসামি করে ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।
২৭ জনের মধ্যে হলমার্কের সাতজন ও সোনালী ব্যাংকের ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলার প্রধান আসামি তানভীর ও তুষার মিরপুর থেকে ৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন। ১৪ অক্টোবর রমনা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আজিজুর এবং ১৮ নভেম্বর মানিকগঞ্জ থেকে তানভীরের স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে র্যাব ও দুদকের বিশেষ টিম গ্রেপ্তার করে।
এ চার আসামি রিমান্ড শেষে এ মুহূর্তে কারাগারে রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে তানভীর, তুষার ও আজিজ আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মীর মহিদুর রহমান (ওএসডি) ও সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন ও সফিজউদ্দিন আহমেদকে আটক করে দুদক। বর্তমানে তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুদক। হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এ পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের চার কর্মকর্তা ও হলমার্কের ৩ কর্তাসহ মোট সাতজন গ্রেফতার হয়েছেন। দুদক জানায়, আসামিদের ধরতে গ্রেফতার অভিযান চলছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে হলমার্ক মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে পরিশোধিত (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ওই পরিশোধিত অর্থ লোপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় সোনালী ব্যাংক ও হলমার্ক কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
রুপসী বাংলা শাখায় হলমার্কের নথিপত্র জব্দ করছে দুদক।