বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০৫০ সাল নাগাদ পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বুধবার যুক্তরাজ্যের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্রিকসভুক্ত দেশের (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন) বাইরে বাংলাদেশ থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত আরো বেশ কয়েকটি দেশ প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় দ্রুত এগুচ্ছে, যারা ২০৫০ সাল নাগাদ পশ্চিমকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
পত্রিকাটি এসব উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর কয়েকটির উপর আলোকপাত করে তিন দিনের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
এতে বলা হয়েছে, এই দেশগুলো বড়। তাদের রয়েছে তরুণ ও বাড়ন্ত জনসংখ্যা । দেশগুলি অবকাঠামো ও শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ করেছে। এগুলোর প্রবৃদ্ধি এমন হারে বাড়ছে যা মন্দায় বিপর্যস্ত পশ্চিমের জন্য ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘নিউ ওয়েভ’ নামে আখ্যায়িত এসব দেশ এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়ছে বলে দেখানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশ দুটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার টেকসই ও শক্তিশালী করতে সহায়তা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একসময় যে দেশগুলোকে নির্বিচারে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলা হতো, খুঁড়িয়ে চলা পশ্চিমা অর্থনীতি ও স্থিতিশীল ব্রিকস অর্থনীতির থেকে নজর এখন তাদের দিকেই ফিরছে। ২০১৩ সালে প্রবৃদ্ধির বিচারে এই দেশগুলোই শীর্ষ ২০ এর মধ্যে অগ্রণী হয়ে থাকবে।
একটা সময় বৈশ্বিক জিডিপি’র ৮০ শতাংশই ছিল ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও জাপানের । কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির চেহারা এখন বদলে যাচ্ছে। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বেশ কটি দেশ পেছন থেকে সামনের কাতারে উঠে আসছে।
এতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক অগ্রগতি বলে দিচ্ছে সেদিন আর বেশি দূরে নয় যে জি-২০ এর পরিসর বাড়িয়ে আরো দেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারসের (পিডব্লিউসি) প্রধান অর্থনীতিবিদ জন হকসওয়ার্থ মনে করেন, ব্রিকস এর বাইরে অন্য উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
গোল্ডম্যান স্যাকসের জিম ও’নীল এক দশকের বেশি সময় আগে প্রথম ‘ব্রিকস’ শব্দটি ব্যবহার করেন। পরে যখন তিনি এর উত্তরসূরী হিসেবে ‘নেক্সট-১১’ গ্রুপের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল বেশ কয়েকটি দেশকে বাছাই করেন। তার এই তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও ভিয়েতনাম।
জন হকসওয়ার্থ মনে করেন, উদীয়মান এই দেশগুলোর দ্রুত উন্নতির মূলে রয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, মুদ্রাস্ফীতি ও বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ, তারা মানব সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে, পশ্চিমা প্রযুক্তি আমদানি ও উন্নয়নে এর সফল ব্যবহার এবং এসব দেশের রয়েছে তরুণ ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা।