পুলিশের উপস্থিতিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনে আবদুল মোনেম লিমিটেড নামের এক নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকার টেন্ডার ডকুমেন্ট ছিনতাই করা হয়েছে। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সন্ত্রাসীরা এ কাজটি করেছে বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। এদের মধ্যে যুবলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের আগের কমিটির সদস্য
আজাদ, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ও ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ধারী শাহীন মোল্লা, সোহাগ আলীম ও রাজের নেতৃত্বে শতাধিক বহিরাগত ছিল। তারা সকাল থেকেই টেন্ডার পাহারা দিয়ে এ কর্মকাণ্ড ঘটায়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, একডি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে থাকেন। রাজউক ভবনে তিনিই এখন টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। মোনেম লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম এ কালাম ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্ব প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণের টেন্ডারে অংশ নেয়ার জন্য তারা সকাল ১১টার দিকে রাজউক ভবনে যান। তাদের কাছে টেন্ডারের শিডিউল জমা দেয়ার পুরো ডকুমেন্ট ফাইল আকারে ছিল। রাজউক ভবনের লিফট দিয়ে ওঠার সময় দু’জন অপরিচিত লোক লিফটের ভেতরেই ডকুমেন্ট ফাইল নিয়ে টানাটানি শুরু করেন। তারা তিন তলায় নামতে চাইলেও তাদের জোর করে চার তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। লিফটের ওই দু’জনের সঙ্গে আরও চার-পাঁচ জন যোগ দিয়ে টেন্ডার ডকুমেন্ট ফাইল ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। পরে তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শাখাকে মৌখিকভাবে অবহিত করেন। তিনি জানান, বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবহিত করার জন্য চেয়ারম্যানের দপ্তরে গিয়ে জানতে পারি রাজউকে বোর্ড মিটিং চলছে। চেয়ারম্যান সহ সব কর্মকর্তা ওই বৈঠকে রয়েছেন। গতকাল ছিল শিডিউল জমা দেওয়ার শেষ দিন। সর্বশেষ সময় ছিল বেলা সাড়ে ১২টা। বোর্ড মিটিং চলে ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। ইঞ্জিনিয়ার এম এ কালাম জানান, বোর্ড সভা শেষে রাজউকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য রাজউক ভবনের বাইরে চলে যান। কালাম বলেন, আমরা এ এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করবো এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে আবার টেন্ডার আহ্বানের আবেদন জানাবে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ঠিকাদার ও রাজউকের কর্মচারীরা জানান, সকাল ১০টা পর থেকেই খোলা জিপে করে একদল যুবক রাজউক ভবনের গেটের বাইরে অবস্থান করছিল। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মোনেম লিমিটেডের কর্মকর্তাদের গাড়ি রাজউক ভবনে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে জিপ থেকে পাঁচ-ছয় জন যুবক নেমে তাদের অনুসরণ করতে থাকে। প্রায় ২০ মিনিট পর ওই পাঁচ-ছয় জন যুবক সেই খোলা জিপে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। রাজউকের একাধিক ঠিকাদার এবং কর্মচারী জানান, রাজউকে কয়েক মাস ধরে ‘খোলা জিপ’ বাহিনী একটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে কোন টেন্ডার হলেই তারা এসে হাজির হয়। খোলা জিপ বাহিনী রাজউকে মানিক বাহিনী নামেও পরিচিত। এই ছিনতাই এর ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে মনিকো লিমিটেড নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও ডকুমেন্ট জমা না দিয়ে রাজউক ভবন ত্যাগ করেন বলেও জানান একাধিক ঠিকাদার। ওদিকে বেলা ১২টায় চেয়ারম্যানের দপ্তরে গেলে জানানো হয় বোর্ড মিটিং চলছে। বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে বোর্ড মিটিং শেষ হওয়ার পরও দফায় দফায় একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন চেয়ারম্যান। পরে বেলা দেড়টায় চেয়ারম্যান উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা তৃতীয় পর্বের প্রকল্প এলাকায় একটি ব্রিজ নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। তবে টেন্ডার ছিনতাই কোন ঘটনা তারা জানেন না। তখন পর্যন্ত কেউ তার কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগও করেননি। তিনি বলেন, রাজউকের টেন্ডার প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয় এবং কোন ধরনের অনিয়মের সুযোগ নেই। টেন্ডার প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে করার জন্য পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয় বলেও তিনি জানান। খোলা জিপ বাহিনী এবং সালাম খান সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন বাহিনী কিংবা ব্যক্তি সম্পর্কে তার জানা নেই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মোনেম লিমিটেডসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান শিডিউল জমা দিতে ব্যর্থ হলেও বেলা আড়াইটায় টেন্ডার খোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় বলে জানা যায়।