রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ৩১ নতুন পরিচালক

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ৩১ নতুন পরিচালক

বহু আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং তিন বিশেষায়িত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ৩১ জনকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার, যাদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত।

সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে।

এই চিত্র পরিবর্তনের কথা অনেকে বললেও বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিচালক মনোনয়নে আগের ধারাই দেখা গেছে।

নতুন ৩১ পরিচালকের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা রয়েছেন অন্তত তিনজন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রয়েছেন অন্তত দুজন, রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন স্বাচিপের এক নেতাও।

এছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে যারা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই সরকার সমর্থক ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে পরিচিত।

বৃহস্পতিবার রাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে একাধিক প্রজ্ঞাপনে সাত ব্যাংকে নতুন ৩১ জন পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়।

সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আটজন, জনতা ব্যাংকে পাঁচজন, অগ্রণী ব্যাংকে আটজন, বাংলাদেশ স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডে (বেসিক ব্যাংক) দুজন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডে (বিডিবিএল) পাঁচজন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একজন এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব) দুজনকে শূন্য পদে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এসেছেন- মো. নজিবর রহমান, রাজনীতিক শেখর দত্ত, নিটল গ্রুপের চেয়ারম্যান মাতলুব আহমাদের স্ত্রী ও উইমেন চেম্বারের সভানেত্রী সেলিমা আহমদ, সাবেক আমলা মো. মাহবুব হোসেন, সাহেব আলী মৃধা, কাজী তরিকুল ইসলাম, মো. এনামুল হক চৌধুরী এবং বিআইডিএস’র গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত।

জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আসা নাগিবুল ইসলাম দীপু আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক উপকমিটির সম্পাদক এবং মো. আবু নাসের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা।

তাদের সঙ্গে এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন ড. রমণী মোহন দেবনাথ, সৈয়দ বজলুল করিম ও অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন।

অগ্রণী ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদে পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি বলরাম পোদ্দার। তার সঙ্গে নতুন নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকার আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা হাসিনা নেওয়াজ এবং স্বাচিপ নেতা ডা. এম এ রউফ সরদার।

এই ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া অন্যরা হলেন- প্রকৌশলী আবদুস সবুর, রহীম আফরোজ গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার নিয়াজ রহীম, শামীম আহসান, মো. আলতাফ হোসেন মোল্লা ও এ বি এম কামরুল ইসলাম।

বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংকে এ কে এম রেজাউর রহমান, এ কে এম কামরুল ইসলাম এফসিএ-কে পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বিডিবিএল- এ পরিচালক পদে এসেছেন ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল। এছাড়াও এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ পেয়েছেন দেওয়ান নূরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মো. আবদুস সালাম, ড. রুস্তম আলী আহমেদ এবং সৈয়দ হোসেন পিয়ার।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে মশিউর রহমান হুমায়ুনকে পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব) অধ্যাপক ড. মদন মোহন দে এবং অধ্যাপক মো. এবায়দুর রহমান প্রামাণিককে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এরা দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

প্রায় মাস তিনেক আগে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে আগের মেয়াদের পরিচালকদের পদ শূন্য হয়।

নতুন করে কাউকে পরিচালক নিয়োগ না দেয়ায় সোনালী ব্যাংকে গত তিনমাস ধরে পরিচালনা পর্ষদের সভাই হয়নি। প্রায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জনতা ব্যাংকের ক্ষেত্রেও।

কারণ সরকারি ব্যাংকে কোনো পরিচালনা পর্ষদের সভা ডাকতে হলে ১৩ জন সদস্যর মধ্যে ৯ জন সদস্যের উপিস্থিতির প্রয়োজন পরে। কিন্তু সরকারি দুটি ব্যাংকের এই সংখ্যক পরিচালক ছিল না।

হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর অভিযোগ ওঠে, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরাও এই অনিয়মে জড়িত।

এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। তবে মামলায় পরিচালকদের কারো নাম আসেনি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর এবার পরিচালক নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে অনেক ভুগতে হয়েছে। অনেক যোগ্য ব্যক্তিকে পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হলেও তারা ভাবমূতি ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে তা ফিরিয়ে দেন।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর