পদ্মাসেতু দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই কেবল এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে এ ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান চায় তারা।
শনিবার বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টাইন এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু ইস্যুতে তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে যদি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে।
বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বাংলাদেশ সফরের দুইদিন পর সংস্থাটির পক্ষে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক দুদকের তদন্তে সহযোগিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। বিশেষজ্ঞ প্যানেল প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশ সফরকালে দুদককে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য উৎসাহ দেয়।
বিশ্বব্যাংক বলছে, গত সপ্তাহে দ্বিতীয় দফা সফরে প্যানেল বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয় খুঁজে পায় এবং আবার তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত করতে বলে।
এতে বলা হয়, বিশেষজ্ঞ প্যানেল তখনই তাদের বক্তব্য জানাবে যখন দুদক তার তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
গত ১ ডিসেম্বর ঢাকায় আসে লুইস গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেল। ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর তিনদফা বৈঠক করেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি দুর্নীতি দমন কমিশনের। সমঝোতা না হয়ে ঢাকা ছেড়েছেন বিশেষজ্ঞ দলটি।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিশ্বব্যাংক প্যানেলের সঙ্গে দ্বিমত হয় দুদকের।
৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সফরের শেষ দিন বিকেলে সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় ইস্কাটনের হেয়াররোডে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বিশ্বব্যাংক প্যানেল। এরপর ফের সন্ধ্যা ৭টায় দদকে আসে লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ দল। পাঁচ মিনিট দুদকে অবস্থান করে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে করমর্দন করে নিচে নামেন।
দুদকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ওকাম্পো তদন্ত ও মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করেই চলে যান।
ওকাম্পো বলেন, “দুদকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা এখানেই সমাপ্তি টানছি।”
তদন্ত ও মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বলেন, “আমরা এখন এয়ারপোর্ট যাচ্ছি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।”
দুই দফা ঢাকা সফর করলেও এই প্রথম সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ওকাম্পো। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন প্যানেলের অন্য দুজন সদস্য হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক প্রধান টিমোথি টং ও যুক্তরাজ্যের সিরিয়াস ফ্রড অফিসের সাবেক পরিচালক রিচার্ড অ্যাল্ডারম্যান।
এদিকে গত বুধবার সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটায় দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান জানিয়েছেন, অনুসন্ধান ও মামলার বিষয়ে সকল সিদ্ধান্ত দুদকের।
মামলার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে কোনো মতবিরোধ হয়েছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সিদ্ধান্ত নেবে দুদক। আপনাদের (সাংবাদিকদের) একটি কথা সুস্পষ্টভাবে বলি, সিদ্ধান্ত হবে দেশের আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী। বিশ্বব্যাংক কি বললো, প্যানেল কি বললো তা আমরা শুনবো, বিবেচনা করবো। শেষ সিদ্ধান্ত দেশীয় আইন অনুযায়ী হবে।”
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা কবে হচ্ছে এ বিষয় জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আইনি ব্যবস্থার বিষয়টি দু`একদিনের মধ্যে বিবেচনা করবো। একটু দেরি হলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।”
তিনি জানান, কিছু বিষয় দুদক নতুন করে পর্যালোচনা ও পুনবির্বেচনা করবে। পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন কর্মকর্তা ও দুদকের সিনিয়র উপপরিচালক আবদুল্লা-আল-জাহিদ, মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ও উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম।
উল্লেখ্য, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে গত ২৯ জুন। পরে সরকার অভিযোগ তদন্তে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করার পর বিশ্বব্যাংক আবার অর্থায়নে ফিরে আসার ঘোষণা দেয় গত ২০ সেপ্টেম্বর।
জানা গেছে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলটি ফিরে গিয়ে তাদের প্রতিবেদন দেবে। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গৃহীত আইনি পদক্ষেপে সন্তুষ্ট না হলে আবারও সংকটে পড়বে পদ্মা সেতু প্রকল্প।