সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে চেম্বার কার্যালয়ে বোর্ড সভা করে পরিচালকরা এ ব্যবস্থা নেন। পরিচালকদের এই সিদ্ধান্ত গতকালই ফ্যাক্স বার্তায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে, এই অব্যাহতি প্রদানকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন চেম্বারের সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহ। তিনি জানান, চেম্বার সভাপতিকে কেবলমাত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরখাস্ত করতে পারে। পরিচালকরা কখনওই অব্যাহতি দিতে পারেন না। প্রায় দুই মাস ধরে সিলেট চেম্বারের কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধ চলছে। এই বিরোধে একদিকে অবস্থান নিয়েছেন চেম্বারের সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহ। আর অন্যদিকে প্রায় ১৭ জন পরিচালকের নেতৃত্বে রয়েছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জিয়াউল হক। বাণিজ্য সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দুই মাস পরপর সিলেট চেম্বারের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যদি ওই সময়ের মধ্যে সভা অনুষ্ঠিত না হয় তাহলে সব পরিচালক ৬ বছরের জন্য পদ হারাবেন। চেম্বারের পরিচালক খোন্দকার শিপার আহমদ জানিয়েছেন, সময়সীমার মধ্যে বোর্ড সভা করতে ২৬ তারিখ চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সচিবের মাধ্যমে গতকালের সভা আহ্বান করা হয়েছিল। আর এই সভা সম্পন্ন করতে গতকাল তারা চেম্বার কার্যালয়ে এসেছেন। ওদিকে, রোববার বিকালে চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সচিবের মাধ্যমে চেম্বার সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহ এক নোটিশে সোমবারের বোর্ড সভা বাতিল করে দেন। এ সময় চেম্বার সভাপতি আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। এরপরও গতকাল বেলা ১১টার দিকে চেম্বারে আসেন চেম্বারের পরিচালকরা। এ সময় সেখানে আসেন চেম্বারের সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহ। উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকরাও। বোর্ডের পরিচালকরা এ সময় চেম্বার সভাপতিকে বোর্ড সভা শুরু করার আহ্বান জানান। কিন্তু চেম্বার সভাপতি প্রতি উত্তরে জবাব দেন, তিনি সভা বাতিল করে দিয়েছেন। সুতরাং কোনভাবে এখানে বোর্ড সভা হতে পারে না। এ নিয়ে কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় উভয়পক্ষের মধ্যে। তবে এক পর্যায়ে চেম্বারের পরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন চেম্বার সভাপতি। মতবিনিময়কালে চেম্বারের পরিচালকরা চেম্বারের স্বার্থ বিবেচনা করে বোর্ড সভা শুরু করার আহ্বান জানান। কিন্তু চেম্বার সভাপতি তাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। একপর্যায়ে চেম্বার সভাপতি চেম্বার কার্যালয় থেকে চলে যান। পরে চেম্বার কার্যালয়ে ১৪ জন পরিচালক বোর্ড সভায় বসেন। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি জিয়াউল হক। উপস্থিত ছিলেন চেম্বারের পরিচালক সালাউদ্দিন আলী আহমদ, খন্দকার শিপার আহমদ, লায়েছ উদ্দিন, গোলাম রব্বানী চৌধুরী, এজাজ আহমদ চৌধুরী, আবু তাহের মো. শোয়েব, পিন্টু চক্রবর্তী, এনামুল কুদ্দুছ চৌধুরী, শামীম আহমদ রাসেল, তাহমিন আহমদ, মাসুদ আহমদ চৌধুরী, আরবার আহমদ দুলাল, মুশফিক জায়গীরদার। সভা শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে ফ্যাক্সযোগে পাঠানো হয়েছে। ১৪ পরিচালকের রেজুলেশন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল চেম্বার কার্যালয়ে ১২তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সভা পরিচালনা করেন চেম্বারের পরিচালক গোলাম রব্বানী চৌধুরী। সিলেট চেম্বারের বোর্ড সভা বাতিলের নোটিশ দেয়ার সচিবকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় পরিচালক তাহমিন আহমদ অবহিত করেন, চেম্বারের বোর্ড সভার কার্য বিবরণী বই চেম্বার সচিবের কাছে রক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু ওই বইটি রয়েছে চেম্বার সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহর কাছে। এব্যাপারে একটি জিডি দায়েরের প্রস্তাব করেন তিনি। তার প্রস্তাবটি এ সময় সর্বসম্মতিক্রমে বোর্ড সভায় গৃহীত হয়। সভায় তাহমিন আহমদ চেম্বার সভাপতির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে ফারুক আহমদ মিসবাহর সদস্য পদ বাতিলের প্রস্তাব করেন। অন্যরা প্রস্তাবটি সমর্থন করেন। সভায় পরিচালক খন্দকার শিপার আহমদ জানান, ১০ই অক্টোবর ৮ জন পরিচালক এবং পরে আরও ৭ জন পরিচালক সহ মোট ১৫ জন পরিচালক গত ১৩ই অক্টোবর চেম্বার সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহর প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিতভাবে অনাস্থা প্রস্তাব পাঠান। সে হিসেবে তিনি সভায় চেম্বার সভাপতির পদ থেকে ফারুক আহমদ মিসবাহকে অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাব পূর্ণভাবে সমর্থন করেন মাসুদ আহমদ চৌধুরী। এ সময় সভায় এই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যবিবরণীটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া, গতকালের সভায় চেম্বার সংশ্লিষ্ট আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে, বোর্ড সভা শেষে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি জিয়াউল হক মানবজমিনকে জানান, ফারুক আহমদ মিসবাহকে অব্যাহতি দেয়ার রেজুলেশনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, পরিচালকরা ফারুক আহমদ মিসবাহকে সভা করার আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু তিনি সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে চলে যাওয়ার পর বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ফারুক আহমদ মিসবাহ গতকাল বিকালে মানবজমিন-এর কাছে জানান, অব্যাহতি প্রদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ অবৈধ। পরিচালকরা কখনও তাকে অব্যাহতি দিতে পারেন না। তিনি এখনও চেম্বারের বৈধ সভাপতি বলে দাবি করেন।