মারলন স্যামুয়েলসের শতকের সৌজন্যে তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই হারের পরও ৫ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে স্বাগতিকরা। শুক্রবার চতুর্থ ওয়ানডে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভার ১ বলে অলআউট হওয়ার আগে ২২৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৭ ওভারে ৬ উইকেটে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৫ রানেই ক্রিস গেইলের বিদায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা ভালো হয়নি। বাংলাদেশ সফরে রানের জন্য লড়াই করা গেইলকে (৪) সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো ফিরিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
দ্বিতীয় উইকেটে কাইরন পাওয়েলের (৪৭) সঙ্গে ১১১ রানের জুটি গড়ে অতিথি শিবিরে স্বস্তি ফেরান স্যামুয়েলস। লেন্ডল সিমন্সের বদলে খেলতে নেমে প্রথম অর্ধশতকের দিকে যাওয়া পাওয়েলকে ফিরিয়ে বিপজ্জনক এ জুটি ভাঙ্গেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
এক পর্যায়ে অতিথিদের স্কোর ছিল ১২৬/১। শতরানের জুটি ভাঙ্গার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ১৮২/৫। পাওয়ার প্লেতে ডোয়াইন স্মিথ (৪) ও কাইরন পোলার্ডকে (১) ফিরিয়ে দিয়ে মূল ধাক্কাটা দেন আব্দুর রাজ্জাক। এর আগে ড্যারেন ব্রাভোকে (১৩) সোহাগ গাজীর ক্যাচে পরিণত করেন নাঈম ইসলাম।
ব্যক্তিগত ১৬, ৯৫ ও ৯৬ রানে তিনবার জীবন পাওয়া স্যামুয়েলসের শতকের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত সহজ জয়ই পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এটি তার চতুর্থ শতক, চলতি বছরের দ্বিতীয়।
১৪০ বলে শতকে পৌঁছানো ম্যাচ সেরা স্যামুয়েলস প্রথম অর্ধশতক করেছিলেন ৫৩ বলে। শতকে পৌঁছানোর পরই অবশ্য তার অন্যরূপ। রুবেল হোসেনের এক ওভারে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। স্যামুয়েলসের (১২৬) ১৪৯ বলের ইনিংসটি ১৭টি চার ও ২টি ছক্কা সমৃদ্ধ।
দলীয় ২২২ রানে মাশরাফির বলে মাহমুদুল্লাহর হাতে ধরা পড়ে স্যামুয়েলস বিদায় নিলেও ডেভন থমাস ও অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি ১৮ বল বাকি থাকতেই সিরিজে অতিথিদের প্রথম জয় এনে দিতে কোনো সমস্যা হয়নি।
বাংলাদেশের পক্ষে রাজ্জাক ও মাশরাফি দুটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে দলকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও আনামুল হক। ১৩তম ওভারে সুনীল নারায়ণের বল কাট করতে গিয়ে তামিম (২২) থমাসের হাতে ধরা পড়লে ভাঙ্গে ৫৭ রানের আত্মবিশ্বাসী উদ্বোধনী জুটি। এক বল পরেই শর্ট কাভারে পোলার্ডের সহজ ক্যাচে পরিণত করে নাঈমকেও (৪) সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি।
পরের ওভারে ফিরে আগের ম্যাচে শতক করা আনামুলকে বিদায় করে স্বাগতিকদের বড় একটা ধাক্কা দেন সুনীল। এক বল আগে ক্যাচ দিলেও নো বলের সৌজন্যে জীবন পাওয়া আনামুল সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। এর আগে ব্যক্তিগত ৮ রানে রবি রামপলের বলে ব্রাভোর হাতেও একবার জীবন পান ৩৩ রান করা এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।
অভিষিক্ত বীরাসামি পারমল নাসির হোসেনকে (৬) শর্ট কাভারে পোলাডের্র ক্যাচে পরিণত করলে চতুর্থ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনারের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ৫৭/০ থেকে বাংলাদেশ পরিণত হয় ৭৮/৪-এ।
পঞ্চম উইকেটে মুমিনুল হকের (১২) সঙ্গে ৩২ ও ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ৫৮ রানের দুটি কার্যকর জুটি গড়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
৫ উইকেটে ১৬৪ রান নিয়ে পাওয়ার প্লেতে যাওয়া বাংলাদেশকে চাপে ফেলেন মুশফিকই। পাওয়ার প্লের (৩৬তম) প্রথম ওভারের শেষ বলে তুলে মারতে গিয়ে তার বিদায়ে দিক হারায় বাংলাদেশ। এগারো বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে মাশরাফির বিদায়ে পাওয়ার প্লের সুবিধা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ১৪ রান তোলে তারা।
অষ্টম উইকেটে সোহাগ গাজীর সঙ্গে মাহমুদুল্লাহর ৩৯ রানের জুটির সৌজন্যে দুশ পেরুয় বাংলাদেশ। সপ্তম অর্ধশতকে পৌঁছে মাহমুদুল্লাহ বিদায় নেয়ার আগে করেন ৫২ রান। তার ৭০ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা।
দলীয় ২১০ রানে সহ-অধিনায়কের বিদায়ের পর বেশি দূর এগোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেয়ার আগে সোহাগ করেন ৩০ রান।
৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা বোলার সুনীল। এছাড়া পারমল (২/৪০) ও স্যামি (২/৪৬) দুটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ২২৭ (তামিম ২২, আনামুল ৩৩, নাঈম ৪, মুশফিক ৩৮, নাসির ৬, মুমিনুল ১২, মাহমুদুল্লাহ ৫২, মাশরাফি ০, সোহাগ ৩০, রাজ্জাক ৩, রুবেল ১*; সুনীল ৪/৩৭, পারমল ২/৪০, স্যামি ২/৪৬, স্মিথ ১/১৪, গেইল ১/৩৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২২৮/৬ (গেইল ৪, পাওয়েল ৪৭, স্যামুয়েলস ১২৬, ব্রাভো ১৩, স্মিথ ৪, পোলার্ড ১, থমাস ১২*, স্যামি ১*; রাজ্জাক ২/৩৪, মাশরাফি ২/৩৪, নাঈম ১/২১, মাহমুদুল্লাহ ১/৪৩)