আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তারকৃত আসামীর গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়া আইন ও সংবিধান বহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছে হাই কোর্ট।
বুধবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের বেঞ্চ একটি মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য করে।
আদালতে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, দেখা যাচ্ছে কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করলেই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হচ্ছে। এটা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ বিচারতো এখানেই হয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে (মিডিয়া ট্রায়াল) ওই অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষয়ে রায় দিয়ে দেওয়া হয়।
“আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাম-পরিচয় লিখে অভিযুক্তকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে স্বীকারোক্তি আদায় করে নিচ্ছে। এভাবে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা, সেখানে আদায় করা বক্তব্য বা স্বীকারোক্তি সম্পূর্ণভাবে আইন ও সংবিধান বিরোধী। আইন অনুসারে কেবল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করে স্বীকারোক্তি নেওয়া যায়।”
ভোলার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ জাবেদ ইমামকে গত ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নীলক্ষেত এলাকা থেকে ব্যাগভর্তি ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হলে তিনি যশোর থেকে এই ফেনসিডিল আনার কথা স্বীকার করেন।
বিভিন্ন মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলন ডেকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার নজির পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের ক্ষেত্রেও রয়েছে।
জজ জাবেদ ইমামকে ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে ‘বাধ্য’ করার বিষয়ে গত ৩ ডিসেম্বর ব্যাখ্যা চান ঢাকার মহানগর হাকিম এম এ সালাম।
৬ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হয়ে উপ-কমিশনার (রমনা) নুরুল ইসলাম, নিউ মার্কেট থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শফিকুল ইসলাম, জব্দ তালিকা প্রস্তুতকারী এস আই নূর হোসেন, মামলা লিপিবদ্ধকারী শাফিয়ার রহমানকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
আদালতের লিখিত আদেশে বলা হয়, “যেভাবে গণমাধ্যমের সামনে বিচারক জাবেদ ইমামকে হাজির করা হয়েছে, তা ফৌজদারি কার্যবিধির পরিপন্থী।
“বিচার বিভাগকে জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিডিয়া ট্রায়াল করেছে, যা পুলিশ কর্মকর্তারা করতে পারেন না।”
পাহাড় কাটায় ক্ষমা প্রার্থনা
এ সময় পাহাড় কাটা সংক্রান্ত আদালতের একটি আদেশ লংঘন করার অভিযোগে দেওয়া আদালত অবমাননায় রুলে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন কেইপিজেডের তিন কর্মকর্তা। তাদের এই মামলার শুনানির এক পর্যায়ে হাই কোর্ট ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্য করে।
নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা তিন কর্মকর্তা হচ্ছেন, কেইপিজেডের উপদেষ্টা ও পরিচালক মো. হাসান নাসির, জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, ডেপুটি ম্যানেজার মো. আবুল কালাম আজাদ।
শুনানির সময় এই তিন কর্মকর্তাই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের পক্ষে ব্যারিস্টার রফিক উল হক ক্ষমার আবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন।
শুনানি শেষে আদালত তাদেরকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়। শুনানিতে আদালত বলে, “পাহাড় কাটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। যত বড় ক্ষমতাবানই হোক না কেন, আমরা পাহাড় কাটতে দিব না।”
আদেশের পর বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, আনোয়ারায় পাহাড় কেটে প্লট তৈরির অভিযোগে এ বছরের ১৬ এপ্রিল হাই কোর্ট রুল জারি করে। একইসঙ্গে পাহাড় কাটা বন্ধ ও সংশ্লিষ্ট এলাকাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়।
ওই নির্দেশ অমান্য করায় ১৫ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল হয় এবং তাদেরকে তলব করা হয়।