আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগী হতে বলেছে আওয়ামী লীগ, যদিও ক্ষমতাসীনদের পদক্ষেপেই বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে ইসির উদ্যোগ প্রত্যাশার পাশাপাশি এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রথম সংলাপে বুধবার অংশ নেয় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
নিবন্ধিত ৩৮টি রাজনৈতিক দলের অনেকগুলো ইতোমধ্যে সংলাপে অংশ নিলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এই সংলাপ বর্জন করেছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো।
সংলাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দশম সংসদ নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
“সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক চর্চায় বর্তমান ইসি যে ধরনের উদ্যোগ নেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করছি।”
সাজেদা চৌধুরীও বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। ভবিষ্যতেও ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতার নিশ্চয়তা প্রদান করছি।”
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ইসির উদ্দেশে বলেন, “আমাদের সঙ্গে যে কোনো দলের মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবাই আপনাদের কাছে আসবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।”
বর্তমান সরকার সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধন আনায় বিলুপ্ত হয়েছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি। বিএনপি ওই পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে হুমকি দিয়েছে, নইলে নির্বাচনে যাবে না তারা।
ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে আদালতের রায়কে যুক্তি দেখানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে শাসনকালের কথাও স্মরণ করানো হচ্ছে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচনের বিকল্প হতে পারে অবৈধ শাসন, সামরিক শাসন। কিন্তু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।”
অতীতের কথা স্মরণ করে দিয়ে ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতি এড়াতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন তিনি।
এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিদায় নেয়ার পর বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিএনপি।
বিরোধী দলের আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংলাপে বলেন, ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় বর্তমান কমিশন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠার অবকাশ নেই।
নির্বাচন আয়োজনের সব ক্ষমতা ইসির রয়েছে জানিয়ে সংবিধান সংশোধন কমিটির সদস্য সুরঞ্জিত বলেন, “গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ব্যাপক সংশোধনী হওয়ায় কমিশন যে কোনো পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করে অবাধ নির্বাচন করতে পারেন।
“তফসিল ঘোষণার পর সব সরকারই ইসির অধীনে চলে আসে। তাই ইসি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”
নবম সংসদের পর চার বছরের মাথায় আবার সীমানা পুনর্নির্ধারণ না করার পক্ষে সংলাপে মত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল এই বিষয়টি তুলে বলেন, এটা করতে করতে গেলে মামলা জটিলতায় পড়তে হবে।
সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, “সংলাপ শেষ হওয়ার পর আমরা সীমানা নির্ধারণে হাত দেব।”
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতাও চান সিইসি। তিনি বলেন, “আপনারা হলেন নির্বাচন কমিশনের মুল স্টেক হোল্ডার। আপনাদের সঙ্গে অনেক আগেই বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের অভাবে বসতে পারিনি।”