অর্থমন্ত্রীর বাসায় রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিশ্বব্যাংক প্যানেল

অর্থমন্ত্রীর বাসায় রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিশ্বব্যাংক প্যানেল

 

ইস্কাটনের হেয়াররোডে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। বুধবার সন্ধ্যা সোয়া পাঁচটায় মন্ত্রীর বাসায় এ বৈঠক শুরু হয়।

তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অ্যালেন গোল্ডস্টাইন মন্ত্রীর বাসা থেকে বের হলেও প্যানেলের অন্য সদস্যরা এখনো বৈঠক করছেন বলে জানা গেছে। এর আগে লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ দল ৩টা ৪০মিনিটে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। পৌনে ৪টায় শুরু হয় বৈঠক। সাড়ে ৪টায় হঠাৎ বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টাইন দুদকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেছেন, “অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য আমরা যাচ্ছি। একটু পর ফিরে দুদকে আসতে পারি।”

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ, আবুলের বিরুদ্ধে যেন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অন্যদিকে, দুদকের একটি পক্ষ চাইছে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যেহেতু ঘুষ লেনদেনের দালিলিক তথ্য পাওয়া যায়নি, তাই তাকে মামলা থেকে রক্ষা করার।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বুধবারের বৈঠকের ওপরই নির্ভর করছে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে কি, করবে না। প্যানেল যদি এ প্রকল্পে দুদকের অনুসন্ধান সুষ্ঠ ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দেশীয় আইনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে প্যানেল অর্থায়নের বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে জানাবে। মূলত, দুদকের প্রতিবেদনের ওপর এখন নির্ভর করছে দেশের ভাবমূর্তি। আশংকা করা হচ্ছে, এ প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার।

এদিকে মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্ট‍াইন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুদকের অনুসন্ধানের কিছুটা অগ্রগতি হলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের লিডার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান আইনজীবী লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো। প্যানেলের অন্য দুজন সদস্য হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক প্রধান টিমোথি টং ও যুক্তরাজ্যের সিরিয়াস ফ্রড অফিসের সাবেক পরিচালক রিচার্ড অ্যাল্ডারম্যান গত শনিবার রাতে ঢাকায় আসেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার দুদকের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।
প্যানেলের সঙ্গে দুদকের অনুসন্ধান টিমের যে চার সদস্য ছিলেন তারা হচ্ছেন, এ প্রকল্পের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও দুদকের সিনিয়র উপপরিচালক আবদুল্লা-আল-জাহিদ, মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ও উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম।

উল্লেখ্য, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে গত ২৯ জুন। পরে সরকার অভিযোগ তদন্তে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করার পর বিশ্বব্যাংক আবার অর্থায়নে ফিরে আসার ঘোষণা দেয় গত ২০ সেপ্টেম্বর।

বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলটি ফিরে গিয়ে তাদের প্রতিবেদন দেবে। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গৃহীত আইনি পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিলে, বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে অর্থ সহায়তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুততার সঙ্গে নেবে। তা না হলে আবারও সংকটে পড়বে পদ্মা সেতু প্রকল্প।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ শীর্ষ খবর