২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যানটা বাংলাদেশের জন্য স্বপ্নের মত। কাল আরেকবার সিরিজের এই পরিসংখ্যানের কথা মনে করিয়ে দিতে নিজেই যেন একটু থমকে গেলেন মোমিনুল হক। বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে যাচ্ছেন আজ বুধবার। আর এমন একটা সময় তিনি দলের এগারজনের একজন যখন সিরিজ জেতা থেকে বাংলাদেশ মাত্র একটি ম্যাচ পেছনে। তাই আগের দুই ম্যাচ নিয়ে ভাবতে চান না তরুণ এই ক্রিকেটার। শুধু আজকের ম্যাচ জিততে চান তিনি। তবে এই চাওয়া তার একার নয়, পুরো জাতি আজ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দিকে তাকিয়ে থাকবে। দিবা-রাত্রি এই ম্যাচে অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা নিয়ে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামবে মুশফিকরা। তাদের সাথে থাকবে কোটি কোটি দর্শকের প্রার্থনা।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের একদিকে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের হাতছানি অন্যদিকে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের জন্য অস্থিত্ব রক্ষার লড়াই। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে তারা। ১৯৯৩ সালের পর একসাথে চারটি টেস্ট ম্যাচও জিতেছে তারা এ বছর। আর এরপরই ঘটেছে অঘটন। প্রথম দুই ওয়ানডে হেরে তাদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। এসব হিসাব-নিকাশ করতে গিয়ে ড্যারেন স্যামিকেও কঠিন ভাবনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সমীকরণ অনেক কঠিন তবে এই সমীকরণের কথা প্রতিপক্ষকে জানাবেন না বলেই কাল হরতালের কারণে অনুশীলনে আসেননি তারা। হোটেল বন্দি হয়ে নিজেদের মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আসলেই কি মানসিক চাপ কমেছে?
এই দিক থেকে নির্ভার থাকার চেষ্টা করছে স্বাগতিকরা। এখনো তিনটি ম্যাচ আছে, সিরিজ জেতার ভালো সম্ভাবনাও রয়েছে তাদের। তবে সাকিব আল হাসানের মত ওয়ানডে সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতে মুশফিকরা পাচ্ছে না পেসার আবুল হাসানকে। ইনজুরির কারণে তিনি দলের বাইরে, তার জায়গায় আজ খেলতে পারেন অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান। সেরা একাদশে ঠাঁই হলে বাংলাদেশের আরেক খেলোয়াড়ের ওয়ানডে অভিষেক হয়ে যাবে আজ। সাকিবের অনুপস্থিতি যেমন দলকে বুঝতে দেয়নি, আবুলের অনুপস্থিতিও কোন সমস্যা হবে না এমনটি মনে করছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। কাল সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মুশফিকুরের কণ্ঠে তাই দৃঢ় শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলে ফলাফল আমাদের পক্ষেই আসবে’। অর্থাত্ বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসের পারদটা এখন অনেক উঁচুতে।
খুলনার জয় থেকে মুশফিকদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে ঠিকই তবে আড়ালে দুশ্চিন্তাও ভর করছে স্বাগতিকদের। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম যদি বাংলাদেশের জন্য ‘পয়মন্ত’ ভেন্যু ঠিক বিপরীত হবে মিরপুর স্টেডিয়াম। হোম অব ক্রিকেট যাকে ধরা হয়, সেই মিরপুর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৫১টি ম্যাচ খেলেছে। মাত্র ২১টি জয় পেয়েছে তারা বাকি ৩০টি ম্যাচে হারতে হয়েছে তাদের। আরো ভয়ংকর পরিসংখ্যানও রয়েছে বাংলাদেশের জন্য। এই মাঠে সর্বশেষ ১৫টি ম্যাচে মাত্র তিনটি জয় পেয়েছে তারা। সঙ্গে যোগ হয়েছে সন্ধ্যার কুয়াশার যন্ত্রণা। কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা তো কাল বলেই ফেলেছেন, যেভাবে কুয়াশা পড়ছে তাতে পরে বল করা দলের বেশ সমস্যা হতে পারে। অর্থাত্ টসে জিতে বাংলাদেশকে আগে বল করতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, কিউরেটর জানিয়েছেন এই মাঠে তিনশ রানও অসম্ভব নয়।
আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে প্রস্তুত তামিম ইকবালও। দায়িত্বটা তার উপরই বেশি তবে এনামুল হক বিজয়ের মত একজন যোগ্য ওপেনারকে পেয়ে আড়ালে নিশ্চয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বাঁ-হাতি এই ওপেনার। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়া এনামুলের সামনে আজও নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ। তরুণ ক্রিকেটার মোমিনুলের সামনেও দারুণ সুযোগ। তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে বাংলাদেশ আজ পাড়ি দিতে চায় স্বপ্নের দেশে। যেখানে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি রয়েছে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে উপরে যাওয়ার সুযোগ। আর দুটি ম্যাচ জিতলে র্যাংকিংয়ে সাত নম্বর জায়গায় উঠে আসবে তারা।