যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের হুমকির মুখেও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে বৃহস্পতিবার ভোটাভুটিতে যাচ্ছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ।
ফিলিস্তিনের প্রস্তাব অনুযায়ী, তারা জাতিসংঘের ‘পর্যবেক্ষক অঞ্চল’ নয়, ভ্যাটিকানের মত ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের’ স্বীকৃতি চায়।
এ দাবি নিয়ে ১৯৩ সদস্য বিশিষ্ট জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভোটে ফিলিস্তিন খুব সহজেই জয় পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় অনেক দেশই ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়েছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা’ দেয়ার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদকে আহ্বান জানানো দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স, স্পেন ও নরওয়ে।
জার্মানি এ দাবিতে ভোটদানে বিরত থাকবে বলে জানিয়েছে। একই কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যও।
ওদিকে, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনের দাবির বিপক্ষে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এ পদক্ষেপ অর্থহীন এবং এতে হিতে বিপরীত হবে। ভোট হলে পশ্চিম তীর সরকারকে তহবিল বরাদ্দ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।
প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন আদায়ে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্রচার চালিয়েছেন। তাছাড়া, এ মাসে ইসরায়েল-গাজা লড়াইয়ের পর ১২টির বেশি ইউরোপীয় রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ফিলিস্তিন ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাদের বরং থেমে থাকা শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরুর দিকে মনযোগ দেয়া উচিত।
ফিলিস্তিন ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের’ স্বীকৃতি পেলে পরবর্তীতে তাদের জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়া সহজ হবে। গত বছর তাদের এ পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছিল।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) বলছে, ১৩০ টির বেশি দেশ এখন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে।
ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীর, গাজা এবং পূর্ব জেরুজালেম মিলিয়ে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসাবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি চায়। আর এর বিরোধিরা চায় কেবলমাত্র ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়েই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটুক।
ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ফিলিস্তিন ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তিচুক্তির আওতায় আলোচনার মধ্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের পথে না গিয়ে জাতিসংঘের মধ্য দিয়ে তা অর্জনের প্রয়াস নিয়েছে।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রন প্রসর বলেন, সরাসরি আলোচনা এড়ানোর এ চেষ্টায় হতাশা বাড়বে, বাড়বে প্রত্যাশা, আদতে কিছুই পরিবর্তন হবে না।
ওদিকে, ফিলিস্তিনের যুক্তি, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এ ভোট মানে আলোচনা এড়ানো নয়, বরং এতে করে ফিলিস্তিনিদের সুবিধা বাড়বে এবং রাষ্ট্রের জন্য তারা যে ভূখ- চায় তা নির্ধারণ করাও সম্ভব হবে।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ওই সমাধানের পথে অবিচল থাকার এটিই সম্ভবত শেষ চেষ্টা বলে মন্তব্য করেন তিনি।