জরুরি অবস্থার প্রশ্নই ওঠে না: হাসিনা

জরুরি অবস্থার প্রশ্নই ওঠে না: হাসিনা

জরুরি অবস্থা জারির যে শঙ্কা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া প্রকাশ করেছেন, তা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বৃহস্পতিবার সংসদে বলেছেন, “এমন কি হয়েছে যে এমার্জেন্সি দেব? এমার্জেন্সি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। গণতন্ত্র অব্যাহত থাকবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুধবার জনসভায় বলেছিলেন, “ফিসফাস শোনা যায়- সরকার জরুরি অবস্থা দেবে। কিন্তু তা দিলেও কোনো কাজ হবে না। দেশের মানুষ কোনো কিছুই মানবে না।”

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পাল্টা অভিযোগ করেন, বিএনপিই জরুরি অবস্থা জারির ‘পাঁয়তারা’ চালাচ্ছে।

জরুরি অবস্থার কথা বলে খালেদা জিয়া দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “জনগণই ক্ষমতার মূল উৎস। জনগণই তা মোকাবেলা করবে।”

বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনিই এমার্জেন্সি দিয়েছিলেন। আপনার প্রেসিডেন্ট এমার্জেন্সি দিয়ে আপনার ছেলেদের জেলে ঢুকিয়েছিল।”

সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের ক্ষমতারোহনের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “জেনারেল এরশাদকে সাত্তার সাহেবের পেছনে লাগিয়েছিলেন। এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় এসেছিলেন, ভাবি সাহেবকে উপ-রাষ্ট্রপতি করবেন বলে।

“এরশাদ সাহেব কথা রাখেননি। ভাবি সাহেবকে কোনো ভাগ দেন নাই। এখন যদি এরশাদ সাহেব সত্যি কথা বলেন।”

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসক হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওনারা (বিএনপি) এমার্জেন্সি-মার্শাল ল’তেই ভালো থাকেন।”

“আমরা জনগণের ক্ষমতায় এসেছি। আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী,” বলেন তিনি।

নবম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে সংসদে যোগ দেয়ার আহ্বানও জানান।

“তারা কথা সংসদে এসে বলুক। দেশকে যেন ধ্বংসের দিকে ঠেলে না দেয়।”

বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির দাবির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিরোধীদলের নেত্রী খুব সোচ্চার, এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান।”

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে যা হচ্ছে- জনগণই এর বিলুপ্তি চাইবে’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১ জুলাই খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছিলেন- সংসদে তা পড়ে শোনান শেখ হাসিনা।

বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওনার একজন নেতা আছেন- যিনি ব্যারিস্টার, মিষ্টি করে কথা বলতে পারেন। ২০ নামে ২০টি একাউন্ট করেছেন, সিগনেচার তার। ভুলে যাবেন বলে তা আবার লিখে রেখেছেন। এটা দুদকে আছে।

“সেই মওদুদ সাহেবও সেসময় বলেছিলেন, ‘অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা ছিল রাজনীতিবিদদের বড় ভুল।”

বর্তমান সরকারের সময়ে উপ-নির্বাচন থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্বাচনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রার্থীকে ভোট দেয়নি, হেরে গেছে। এত অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এর আগে হয়েছে? এটা দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।”

“জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় আসব, না হলে মাথা পেতে নেব। এটাই তো আমাদের রাজনীতি।”

ডিসেম্বর মাসে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের বিরোধী দলের নেত্রী আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছেন, যে মাসটা হচ্ছে বিজয়ের মাস।

“যে মাসে পাকিস্তানী বাহিনী মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। সে মাসে স্বাধীনতা বিরোধীদের রক্ষায় এই ডিসেম্বর মাসে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল, আমাদের মা-বোনদের হত্যা করেছিল। ৭৫ এর পর সামরিক অধ্যাদেশ জারি করে জেনারেল জিয়া তাদের রক্ষা করেছিল।

“উনি বলেন, উনার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা। উনি দাবি করেন ওনার স্বামী মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অন্য দলগুলোরও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

“উনি (খালেদা) ১৮ দল করেছেন কাদের নিয়ে। যুদ্ধাপরাধী, যারা পলাতক, যারা পুলিশের ওপর হামলা করেছিল- তারা তার মঞ্চে ছিল। যিনি, সাত ছাত্র হত্যার আসামি- তিনি ছিলেন তার মঞ্চে। উনি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সোনার দোকানে ডাকাতি মামলার আসামি। তাকে মাফ করে দিয়েছিলেন ওনার স্বামী।”

“তখন কথাই ছিলো, সাবাশ সাবাশ জিয়া ভাই। সাত খুন করে মাফ পাই,” ছাত্রলীগের এক সময়ের নেতা শফিউল আলম প্রধানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন শেখ হাসিনা।

হাসতে হাসতে হাসিনা বলেন, “সাবাশ সাবাশ বিরোধী দলের নেত্রী, এই না হলে রাজাকারা পালন। রাজাকার পালন করে যাচ্ছেন।”

শেখ হাসিনা বলেন, “উনি (খালেদা) তো আমার বিরুদ্ধে ১৪টা মামলা দিয়েছিলেন। আমি বলেছি, কোনো মামলা প্রত্যাহার করা যাবে না, তদন্ত হবে। আমি জানি, আমি দুর্নীতি করিনি। যে অন্যায় করেনি- সে আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে। জনগণ জানে কে দুর্নীতি করে।”

ক্ষমতায় গেলে দুটি পদ্মা সেতু করবেন বলে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “মিথ্যা বলার একটা সীমা থাকে? আমরা ফিজিবিলিটি শেষ করে এলাম, একটাই করতে পারল না। আবার দুটি করবেন!”

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই আশুলিয়ায় এবং চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

শীর্ষ খবর