ঈদুল আযাহার পর দুই সপ্তাহ পতনে নিমজ্জিত থাকার পর অবশেষে উত্থানে ফিরেছে উভয় বাজার। তবে সূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেন। অর্থাৎ গত সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়েছে ০.৪২ শতাংশ আর লেনদেন আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫.৯৮ শতাংশ কমেছে।
তবে বাজারের এ উত্থানকে কারসাজি বলে অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, অব্যাহত পতনের কারণে যখনই বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসে তখনই বাজারকে উত্থানে নিয়ে আসা হয়। তারা বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নি:স্ব থেকে আরো নি:স্ব করার জন্যই বাজারকে বারবার ফেলে দেয়া হয়।
বিনিয়োগকারী কাফি আলম বলেন, টানা পতনের পর গত সপ্তাহ উত্থানে পার করেছে বাজার। এটা মূলত রাস্তায় বিনিয়োগকারী নামার কারণে। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যখন রাস্তায় নামতে বাধ্য হয় তখনই বাজারকে উত্থানে নিয়ে আসা হয়। এ থেকে বুঝতে হবে বাজার নিয়ন্ত্রনকারীদের সঙ্গে কারসাজিকারীদের কোন যোগ সূত্র থাকতে পারে। তিনি আরো বলেন, এ কারণেই গত সপ্তাহে নামমাত্র সূচক বেড়েছে তবে লেনদেন আগের সপ্তাহের চেয়ে আরো কমে গেছে।
বিনিয়োগকারী সাইদুল ইসলাম বলেন, বাজারকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ বাজারকে অতি দ্রুত স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনা। তিনি বলেন, যখনই নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুর্বল হয়ে পরে তখনই কারসাজিচক্র বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি বলেন, যেহেতু গত প্রায় তিন বছর যাবৎ বাজারে পতন লেগেই আছে তাই সহজেই বুঝতে হবে বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যর্থ। তাই এখনই তাদের পদত্যাগ করা উচিৎ।
গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৫ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩ কার্যদিবস সূচক বেড়েছে ১৪২ পয়েন্ট আর দুই কার্যদিবস সূচক কমেছে ১২৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ সার্বিকভাবে গত সপ্তাহে ডিএসইতে সূচক বেড়েছে ১৮.০৫ পয়েন্ট বা ০.৪২ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইতে সূচক কমেছিলো কমেছে ১৩৭.৩৫ পয়েন্ট বা ৩.০৬ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ২৮৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বাড়ে ১১৫টির, কমে ১৫৬টির, অপরিবর্তিত থাকে ৭টির আর ৬টি প্রতিষ্ঠানের কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে সূচক বাড়লেও লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসই’র ৫ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪২৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৩ হাজার ৩৮৫ টাকা। আগের সপ্তাহে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫১৪ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৯৭২ টাকা। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ৯০ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার ৫৮৭ টাকা বা ৫.৯৮ শতাংশ কম লেনদেন হয়েছে। ডিএসই’র গড় লেনদেনে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮৪ কোটি ৮৬ লাখ ৮২ হাজার ৬৭৭ টাকা।
সপ্তাহে শেষে ডিএসইতে টপটেন গেইনারের শীর্ষে অবস্থান করে নেয় ওষুধ ও রসায়ন খাতের গ্লাক্সোস্মিথ ক্লাইন। সপ্তাহ শেষে এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর ১৯.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অবস্থানে ওঠে আসে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’র টপটেন গেইনারে থাকা অপর কোম্পানিগুলো হলো-আলহাজ্ব টেক্সটাইল ১৭.৭৬ শতাংশ, বার্জার পেইন্টস ১৬.১৪ শতাংশ, এইচআর টেক্সটাইল ১৫.৭৭ শতাংশ, মেরিকো বাংলাদেশ ১৪.৩৪ শতাংশ, বিডি অটোকার্স ১৪.০৫ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১২.৩৯ শতাংশ, এসিআই ফর্মূলেশন ১১.২৯ শতাংশ, বাটা সু ১০.৮২ শতাংশ এবং লিনডে বাংলাদেশ লিমিটেড ১০.৫০ শতাংশ।
অপরদিকে টপটেন লুজারের শীর্ষে ওঠে আসে সেবা ও আবাসন খাতের সমরিতা হসপিটাল। সপ্তাহ শেষে এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর ২৮.৩২ শতাংশ কমে গেলে এ অবস্থানে নেমে যায়। লুজারে থাকা অপর প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ফাইন ফুডস ২০.৪২ শতাংশ, মুন্নু সিরামিক ১৬.৭৫ শতাংশ, কাশেম ড্রাইসেল ১৫.২৩ শতাংশ, জুন স্পিনার্স ১৪.৪০ শতাংশ, প্রাইম টেক্সটাইল ১৩.৬৪ শতাংশ, ন্যাশনাল টিউবস ১৩.৩৮ শতাংশ বঙ্গজ ১২.৭৯ শতাংশ, মালেক স্পিনিং ১২.৬৪ শতাংশ এবং সায়হাম টেক্সটাইলের ১১.৮৪ শতাংশ।
এদিকে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহ সূচক বেড়েছে। তবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩ কার্যদিবস সূচক কমেছে ২৫৭ পয়েন্ট আর বেড়েছে ২৬০ পয়েন্ট অর্থাৎ সার্বিকভাবে গত সপ্তাহে সিএসইতে সূচক বেড়েছে ২.৭৩ পয়েন্ট বা ০.০৩২ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে সূচক বেড়েছিলো ২৯০.৪ পয়েন্ট বা ৩.৩২ শতাংশ। গত সপ্তাহে সিএসইতে মোট ২২১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বাড়ে ৮৪টির, কমে ১২৭টির আর অপরিবর্তিত থাকে ১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর।
গত সপ্তাহে সিএসইতে সূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেনে পরিমাণ। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৬৬ কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯৯৫ টাকা। যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১১ কোটি ৮৯ লাখ ১৪ হাজার ৮৫৫ টাকা কম। এর আগে সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১৭৮ কোটি ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫০ টাকা। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে গড় লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩ কোটি ২৩ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৯ টাকা।